ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খালেদার শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৮
খালেদার শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বিস্তারিত জানাচ্ছেন

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যাগুলো চিকিৎসকরা চিহ্নিত করেছেন।

তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী জানান, খালেদা জিয়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (গিটে গিটে ব্যাথা বা বাত) রোগে আক্রান্ত। ওনার হাত বাঁকা হয়ে গেছে, হাত তুলতে পারছেন না।

এছাড়া ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাম উরুর জয়েন্টে ব্যথা ও বাম হাঁটু ফুলেছে।  

সোমবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। আর সবকিছু ঠিক থাকলে দুই সপ্তাহ পর তার (খালেদা জিয়া) মূল চিকিৎসা শুরু হবে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তাছাড়া তার অনেকগুলো রোগ রয়েছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে তারপর মূল চিকিৎসা শুরু হবে।

মেডিসিন বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার রোগগুলো সম্পর্কে বলেন, মেডিকেল বোর্ড হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে হয়েছে। ওনার মূলত যে রোগ হয়েছে তা হচ্ছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এই রোগের কারণে ওনার শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা বা বাত সৃষ্টি হয়েছে। এ রোগের ওষুধ তিনি গত ৩০ বছর ধরে খাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক পরিমাণে বা ডোজে খাচ্ছিলেন না। তাই জটিলতা বেড়েছে। এছাড়া বাম হাত বাঁকা হয়ে গেছে বা হাত তুলতে পারছে না, সবসময় কাঁপছে। ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাম উরুর জয়েন্টে ব্যথা ও বাম হাঁটু ফুলে গেছে। তাছাড়া ওনার দুই হাঁটু অনেক আগেই রিপ্লেস করা রয়েছে।  

এদিকে ২০ বছর ধরে উনি ডায়াবেটিকে ভুগছেন। সেটিও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে নেই। আর ওনার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগটি এখন বাড়ছে। তাছাড়া শরীরে সোডিয়াম কমে গেছে এবং শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।  

এ সময় তিনি বলেন, এর আগে আমরা কারাগারে গিয়ে বলেছিলাম। এমন একটি হাসপাতালে ওনাকে নিয়ে যেতে যেখানে সব ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। সে অনুসারেই উচ্চ আদালত এই হাসপাতালে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আমাদের সবার সঙ্গে উনার এখনো দেখা হয়নি। বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে দুইজন আলাদা আলাদা সময় গিয়েছেন। বর্তমানে ওনার রোগের মেডিকেল হিস্ট্রির কাজ করছেন বাকি সদস্যরা। তবে ওনার যে রোগ রয়েছে সেটা রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক এর অন্তর্গত। তিনি মূল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন,  ওনার কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে নেই। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে না এনে ওষুধ দেওয়া যাবে না। তাছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। সেগুলোর রিপোর্ট এনে তখন ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। আমরা এখন চিকিৎসার পূর্ব প্রস্তুতিতে আছি। সবকিছু ঠিক থাকলে মোটামুটি দুই সপ্তার মধ্যে মূল চিকিৎসা শুরু করতে পারবো।  

এর আগে রোববার (০৭ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে গিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী খালেদা জিয়ার আগের ও বর্তমান ফাইলপত্র পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা করেন। এরপর সোমবার আবারো বোর্ড বসবে বলে জানান।

দীর্ঘ আলোচনার পর বেরিয়ে রোববার ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দীর্ঘ এক ঘণ্টা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ফাইল পর্যালোচনা করেছি। সঙ্গে ছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন রহমানও।

ডা. জলিল বলেন, এখন তো তার চিকিৎসাই চলছে। আগে থেকেই তিনি ওষুধ খাচ্ছেন। ফাইল পর্যালোচনা শেষে বেরিয়ে এসেছি, আগামীকাল (সোমবার, ৮ অক্টোবর) আবার বসবো।

শনিবার (৬ অক্টোবর) খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬ তলায় ৬১১ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। তার আগে ওই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সেদিন জানানো হয়, রোববার দুপুরে মেডিকেল বোর্ড খালেদাকে দেখে তার চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।  

অবশ্য ওই মেডিকেল বোর্ড খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুনের বিষয়ে জানতে চান। তখন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বিএনপি প্রধানকে জানান, রোববার ডা. মামুনকে সঙ্গে রাখা হবে।

এরপর রোববার ডা. মামুন রহমানকে সঙ্গে নিয়েই মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদার চিকিৎসার ব্যাপারে কেবিন ব্লকের ৬১২ নম্বর কেবিনে আলোচনায় বসেন। সেখানে ছিলেন মেডিকেল বোর্ডের অপর চার সদস্য ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড পেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ আরও বেশ ক’টি মামলায় তার বিচারকার্য চলছে। খালেদা জিয়া অসুস্থ দাবি করে বারবার বিএনপির পক্ষ থেকে তার বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দাবি করা হচ্ছে।

খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করার নির্দেশনাসহ তার চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি রিট করা হয়।  

এরমধ্যে আবার গত ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।

পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর সে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যেখানে স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার মত দেয় মেডিকেল বোর্ড। তবে যে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে সে হাসপাতালের কথা সুপারিশ করা হয়। সে বিবেচনায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এদিকে ওই রিট আবেদনের পর ৪ অক্টোবর দুপুরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ খালেদাকে বিএসএমএমইউতে দ্রুত চিকিৎসা এবং ভর্তির জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠনে নির্দেশনা দেন। সেদিন রাতেই এ আদেশের কপি কারাগারে ও বিএসএমএমইউতে পৌঁছায়। এরপর উভয় কর্তৃপক্ষই খালেদাকে হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করে। এরপর ৬ অক্টোবর বিকেলে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিমা পারভীন, ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ।

** খালেদার কেবিনে মেডিকেল বোর্ড, সঙ্গে ডা. মামুনও
** ডাক্তার মামুন কই? জানতে চাইলেন খালেদা
** রোববার দুপুরে শুরু হবে খালেদার চিকিৎসা

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
এএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।