ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন করতে চান বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৮
বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন করতে চান বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞানী দম্পতি। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈল উৎপাদনে বাংলাদেশে প্ল্যান্ট স্থাপন করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী দম্পতি ড. মইন উদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী। 

সোমবার (০৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আগ্রহের কথা জানান।  

ড. মইন উদ্দিন বলেন, বর্জ্য পুনরায় প্রক্রিয়াজাতকরণ করে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে।

বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) ও জেট ফুয়েল তৈরি করতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছি। এর মাধ্যমে প্রতি টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে এক হাজার ৩০০ লিটার জ্বালানি তেল, ১০ সিলিন্ডার এলপি গ্যাস ও ২৩ লিটার জেট ফুয়েল তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি থেকে প্রতি লিটার তেল উৎপাদনে খরচ হবে মাত্র ২০ টাকা।  

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে দিন দিন প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে আমাদের চারপাশে জমছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এটা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্লাস্টিক পচনশীল নয়, তাই মাটি হারাচ্ছে তার উর্বর শক্তি। খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে। ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রোধ হচ্ছে। ফলে মশার প্রকোপ বেড়েই চলছে। এর প্রাদুর্ভাবে বন ও জলজ জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।  

ড. মইন উদ্দিন বলেন, ওয়াস্ট টেকনোলজিস এলএলসি কোম্পানি এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। বর্তমানে বর্জ্যকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে এ নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তিনি।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়ায় এর বর্জ্য মানুষ ও সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যান্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব।  

এর বাইরে সবটাই বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে। এতে প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে চিন্তিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।  

ড. মইন উদ্দিন বলেন, যত্রতত্র প্লাস্টিক ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ। ডাস্টবিন, রাস্তাঘাট ও খাল-বিলে ফেলা প্লাস্টিক সংগ্রহ করলে একদিকে শহর পরিচ্ছন্ন ও পরিবশেবান্ধব হবে, অপরদিকে এই বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনও করা হবে। তবে এই বর্জ্য সংগ্রহে আলাদা কোনো খরচও হবে না।  

দায়বদ্ধতার  কারণে বাংলাদেশে এই প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকা হবে দক্ষিণ এশিয়ার মডেল। দক্ষ লোকবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ফলে বিদেশি কোনো জনবল নিয়োগ করতে হবে না। দেশের লোকজনই এই প্ল্যান্ট চালাবে। এতে কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।  

ড. মইন উদ্দিন সরকার বলেন, বাংলাদেশে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে তারাও।  

এই বিজ্ঞানী দম্পতি জানান, দেশের কয়েকটি সিটি করপোরশেনও আমাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এজন্য বাস্তবে প্ল্যান্ট দেখতে যুক্তরাষ্ট্রও পরিদর্শন করবেন তারা।  

কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানী ড. মইন উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। সেখানকার ম্যানচেস্টার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকলোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।  

বিগত ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে গবেষণার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ড. মইন। ২০০৫ সাল থেকে বিজ্ঞানী দম্পতি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০১০ সালে প্লাস্টিক তেল উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন ও পেটেন্ট করেন।  

বর্তমানে ওয়াস্ট টেকনোলজিস কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক বর্জ থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এই বিজ্ঞানী দম্পতি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
টিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।