পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের দিকে তাকালে যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে। অ্যাপ্রোচ সড়কের ফলে সড়ক সংলগ্ন গ্রামগুলোতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। অবহেলিত চরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ সব এলাকায়ও গড়ে উঠবে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান। কলকারখানা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কাজের সুযোগ তৈরি হবে এ অঞ্চলের অনেক মানুষের। সব মিলিয়ে নদীভাঙা, রোদে পোড়া চরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে সেই দিনটি খুব দূরে নয়। এমনটিই ভাবনা চরের মানুষের।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফোর লেন, সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি কাজের উদ্বোধন ও অগ্রগতি দেখতে আগামী ১৩ অক্টোবর পদ্মার পাড়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের মনে জেগে উঠেছে চঞ্চলতা। উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠছেন শিবচর আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও পদ্মাসেতু ও সেতু সংলগ্ন শিবচরের চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ।
সরেজমিনে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাতসহ পদ্মাসেতু সংলগ্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে তাদের এই মনোভাব।
কাঁঠালবাড়ী রুটে লঞ্চে ঝালমুড়ি বিক্রি করা এই এলাকার এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বললে তারা বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্ন। আমরা দ্রুত পদ্মাসেতুর কাজ শেষ দেখতে চাই। পদ্মাসেতুর সঙ্গে আমাদের এলাকারও উন্নয়ন হবে। আগে যেখানে কোনো রাস্তাই ছিল না আজ সেখানে বিদেশের মতো রাস্তা। চরের মানুষদের অনেকেই ‘খাটো’ করে দেখে। কিন্তু আগামীতে এই চরই হবে উন্নয়নের মডেল। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটাই চাই।
চরজানাজাত এলাকার কুদ্দুস শেখ। পেশায় জেলে। পদ্মার বুকে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সকাল-সন্ধ্যা বা রাত অবধি মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পদ্মাসেতু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে সেতুর দিকে তাকিয়ে থাকি। স্প্যান উঠানো হয়েছে। অনেকগুলো পিলার পানির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ভালো লাগে। পদ্মাসেতু নিয়ে আমাদের এপারের মানুষের গর্ব হয়। তাছাড়া পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই চর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উন্নয়নের কথা বলেছেন। পদ্মাসেতুর সঙ্গে সঙ্গে এই চরের উন্নয়ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
চরের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ কহিনুর মিয়া বলেন, শুনেছি চরে অলিম্পিক ভিলেজ হবে। স্যাটেলাইট সিটি হবে। বিমানবন্দর হবে আশপাশে। যে কথা একটু রটে, তা কিছুটা হলেও বটে। পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হবার পর থেকেই এই বিশাল চর নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে সরকার। ভবিষ্যতে এ চরের মানুষ উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
শিবচর উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একমাত্র দ্বীপ ইউনিয়ন হচ্ছে চরজানাজাত ইউনিয়ন। এছাড়াও পদ্মা বেষ্টিত রয়েছে কাঁঠালবাড়ী, মাদবরেরচর ও বন্দোরখোলা ইউনিয়ন। তাছাড়া শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাগুরখণ্ডসহ আশপাশের বিশাল এলাকা পদ্মার চরাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। চরাঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত চরের মানুষ। এ সব চরের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই কৃষিজীবী।
এছাড়াও এই এলাকার একটি বড় অংশ জেলে। মূল ভূ-খণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন চরজানাজাত ইউনিয়নে সড়ক পথে কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ চরের ৬৫টি গ্রামে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বাস। কৃষিকাজ, গবাদি পশু পালন, মাছ শিকার ও ঘাট এলাকায় ফেরি করে পণ্য বিক্রি এ চরের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। পিছিয়ে পড়া এই পদ্মার চরে বইছে উন্নয়নের ছোঁয়া। অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হাইটেক পার্ক অ্যান্ড টেকনোলজি, বিমানবন্দরসহ নানা ধরনের উন্নয়ন কাজের জন্য পদ্মার চর বেছে নেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে পদ্মাসেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই। বিভিন্ন সময় চরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে সরকারের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আগমনকে চরের মানুষের মনে আশা জাগানিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে এ কাজের ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি কাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
আরএ