সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর) থেকেই রাজধানীতে প্রবেশে কড়াকড়িসহ সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে থাকছে বাড়তি নজরদারী।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রাজধানীর প্রবেশদ্বার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র্যাব-পুলিশের অর্ধশতাধিক চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি কার্যক্রম বাড়ানো হবে। বিভিন্ন সড়কে র্যাব-পুলিশের টহল ব্যবস্থাও জোরদার করা হবে। রাজধানীর বিশেষ স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। প্রস্তুত থাকবে সাজোয়া যান ও জলকামান।
এছাড়া, পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালত এলাকা ঘিরে থাকছে কয়েকস্তরের আলাদা নিরাপত্তাবলয়। রায়কে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
তবে এ রায়কে নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ২১ আগস্টের রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কোনো হুমকি নেই এবং নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা আদালতের একটা স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। এ রায়কে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতার চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে, কোনো ধরনের অপতৎপরতা বরদাসত করা হবে না। নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একুশ আগস্টের রায় ঘিরে আসামিদের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। অতীতে যারা রাজপথে ভাঙচুর-নাশকতা করেছিল তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গতিবিধির ওপরও নজরদারি রাখা হচ্ছে। এ রায়কে ঘিরে বড় নাশকতার আশঙ্কা নেই। তবে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার এবং কাশিমপুর ১ ও ২ নং কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই এ তিন কারাগারে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। রায়ের দিন আসামিদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে-পেছনেও থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। আসামিদের আনা-নেওয়া নির্বিঘ্ন করতে কারা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সমন্বয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশের জনগণ এ মামলার রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার মানুষ দেখতে চায়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে সংঘবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানকে হত্যার নীলনকশা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতা, জঙ্গি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারাও এ হামলার নীলনকশায় জড়িয়ে পড়েন। সে হিসেবে এ মামলার রায়ের তাৎপর্য বহুগুন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
অধিকতর তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।
সম্পূরক চার্জশিটে যে ৩০ জনকে আসামি করা হয় তারা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও জোট সরকারের মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বকস, ডিএমপির তৎকালীন উপ কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, সাবেক উপ কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, হুজির আমির মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আবদুর রউফ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইর সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত), বিএনপির ঢাকা মহানগর নেতা আরিফুর রহমান, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, সিআইডির বিশেষ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মো. হানিফ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু।
আসামিদের মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়েছে। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার বর্তমান আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। আসামিদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন বাকি ১৮ জন। তারা হলেন- তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত হোসেন, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
পিএম/এসএইচ