এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি। দীর্ঘ ১৪ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে বুধবার (১০ অক্টোবর)।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিন মেম্বারের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী নাজিমউদ্দিন সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে ওই সমাবেশে যান।
রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার বাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন আওয়ামী লীগ কর্মী নাজমুল।
বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ চলছিল। আমি ট্রাকে তৈরি মঞ্চের পাশে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে প্রথম গ্রেনেডের বিস্ফোরণ হয়। দেখলাম আইভি আপা (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমান, গ্রেনেডে তার দুটি পা উড়ে যায়) আস্তে আস্তে বসে পড়ছেন, চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আইভী আপাকে ধরতে আমি ছুটে যাচ্ছিলাম এমন সময় দ্বিতীয় বিস্ফোরণে। এরপর আর কিছু মনে নাই।
‘যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজের আবিষ্কার করলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মৃত ভেবে আমাকে হাসপাতাল মর্গে লাশের সারিতে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকসহ সবাই মনে করেছেন আমি মারা গেছি। ’
তিনি বলেন, শুনেছি, মর্গে লাশের সারিতে আরো লাশ রাখতে গিয়ে কেউ একজন আমার বুকে পা দেয় সে সময় আমি নড়ে চড়ে উঠি। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে তখন আমার জ্ঞান ফেরান।
‘আমার এখনো মনে আছে, কেউ একজন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করেছিল। আমি আমার নাম বলতে পেরেছিলাম, রক্তের গ্রুপ বলতে পেরেছিলাম। পরে চিকিৎসার জন্য মর্গ থেকে আমাকে বের করে নেওয়া হয়। ’
নাজমুল বলেন, আমাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়া হয়।
নাজমুল বলে চলেন, ১৪ বছর ধরে যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। মরণ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। এখনো স্প্লিন্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াই। শীত আসলে যেন হাত-পা অবশ হয়ে যায়। গরম এলে চুলকানি, অনেক সময় রক্ত বের হতে থাকে।
‘এখন আছি মোটামুটি ভালো, বলতে পারেন বেঁচে আছি। কখনো কখনো এই যন্ত্রণায় বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। ’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, তিনি ২১ আগস্টের আহতদের চিকিৎসা করিয়েছেন। আহত ও শহীদদের আর্থিক সহায়তা করেছেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে মাসিক ভাতা পাই চিকিৎসার জন্য।
গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে নাজমুল বলেন, রায়ে আমরা দৃষ্টান্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। নেপথ্যে থেকে যারা জড়িত তারাও যেন কোনো রকম ছাড় না পায়, তাদেরও কঠোর শাস্তি চাই।
তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে এই আওয়াম লীগ কর্মী বলেন, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। তারা সঠিক তদন্ত করেনি। তারা তদন্তের নামে নাটক সাজিয়েছিলো। উল্টো আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করেছিল। অথচ এ ঘটনা ঘটেছিলো নাকি তাদের জ্ঞাতসারেই।
নাজিমউদ্দিন নাজমুল এখন ‘২১ আগস্ট বাংলাদেশ’ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। শেখ হাসিনাসহ আহত হন শতাধিক নেতা-কর্মী।
এ ঘটনায় একটি মামলা করে পুলিশ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পৃথক দুটি মামলা করা হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর দুইটি মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে বুধবার।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোর ০৯, ২০১৮
টিএম/এমইউএম/এমএ