ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘সেদিন আমার বুকের ওপর পাড়িয়ে মানুষ গেছে’  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
‘সেদিন আমার বুকের ওপর পাড়িয়ে মানুষ গেছে’   ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা।

ময়মনসিংহ: ঘাতক গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নেই তার শরীরে। তবে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চলাকালে দলীয় কার্যালয়ে ট্রাকে বানানো মঞ্চ থেকে ছিলেন মাত্র ১২ কী ১৪ ফুট দূরত্বে। নারকীয় গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতার সেই স্মৃতি আজো ভুলতে পারেননি তিনি। 

 

 

 

গ্রেনেড হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন ছুটে গেছেন। আর তখনই জীবনের দিকে পালিয়ে ছুটা মানুষের পায়ের চাপে পদপিষ্ট হয়েছে তার বুক।

ইতিহাসের জঘন্যতম ওই বর্বরতার কথা মনে হলেই আজো আঁতকে ওঠেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক।


দুঃসহ সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি, নাসিম ভাই, লতিফ সিদ্দিকী আর মান্নান খান একসঙ্গে বসেছিলাম। ট্রাকের মঞ্চ থেকে মাত্র ১২ থেকে ১৪ দূরত্বে, আওয়ামী লীগের অফিসের পাশের ফুটপাতে। হঠাৎ বীভৎস ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা। সবাই হতভম্ব।

‘আমি রাস্তায় শুয়ে পড়লাম। মানুষ আমার বুকের ওপর পাড়িয়ে যাচ্ছে। স্তব্ধ হয়ে দেখছি পুরো সভাস্থল এক মৃত্যুপুরী। রক্তাক্ত শরীরে লুটিয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। যে যেভাবে পারছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন। ট্রাকের উপর বানানো মঞ্চে যারা নেত্রীর কাছে ছিলেন তাঁরা তাকে বাঁচাতে মানব ঢাল তৈরি করছেন। ’ 

দেশ-বিদেশে আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর) বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসনের এই সংসদ সদস্য।  


নিজেকে স্বাভাবিক করে সাবেক ছাত্রনেতা ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার বুকে অনেক দিন ব্যথা ছিলো। তবে এটাকে কখনই গুরুত্ব দেইনি আমি। নারকীয় ওই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হন। অনেকেই চিরতরে চলাফেরার শক্তি হারিয়েছেন। ’ 

তিনি বলেন, যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর একটি আঁকুতি তারা যেন নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার দেখে যেতে পারেন। এক যুগেরও বেশি সময় পর এই রায়ের মধ্যে দিয়ে তাদের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।   


‘গ্রেনেড হামলার বীভৎস সেই চিত্র ভুলার মতো না’ এমনটিক উল্লেখ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২১ আগস্টের এই হামলার মূল টার্গেটই ছিলেন আমাদের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।  তাকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিলো গ্রেনেড। অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পান। তবে শ্রবণশক্তি হারান একটি কানের।


আওয়ামী লীগকে নির্মূল ও নেতৃত্ব শূন্য করার জন্যই এই হামলা, যোগ করেন তিনি।

 

তার ভাষ্য, ‘পঁচাত্তরের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই হাওয়া ভবনের ইন্ধনে এই নারকীয় হামলা হয়েছিল। ’ 


ড. রাজ্জাক বলেন, ‘খালেদা ও তাঁর ছেলের ইন্ধন ও মদদ ছাড়া দিনের আলোতে এমন আক্রমণ করা সম্ভব না। আমি হুকুমদাতা, মদদদাতা, গ্রেনেড সরবরাহকারী ও সহযোগিতাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। ’ 


এই রায় প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তৎকালীন জোট সরকারের পরিকল্পনা ও মদদে এই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আমরা এখন রায়ের অপেক্ষায় আছি। আমরা ন্যায় বিচার পাবো এমন প্রত্যাশা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।