স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রামদিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় ওই সম্পত্তি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেখানে সাব রেজিস্ট্রি অফিস গড়ে তোলা হয়েছে।
বেথুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষীরোদ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন মহাপরিদর্শক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এই সম্পত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সাব রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
অবশেষে ২০১৩ সালে অক্টোবরে কাশিয়ানী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। তিনি কিছুদিন পর জানতে পারেন উপজেলার রামদিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণের জন্য ৪৭ শতাংশ সরকারি জায়গা রয়েছে।
তিনি প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ওই সরকারি সম্পত্তিকে আগে অবৈধ দখলমুক্ত করেন। পরে সেখানে বালু-মাটি ভরাট করে স্থানীয় প্রবাসী ও সরকারি বরাদ্দে এক হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি টিন শেড ঘর নির্মাণ করেন। সেখানেই শুরু করেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। নবনির্মিত সাব রেজিস্ট্রি অফিসের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ-ফলজ গাছের চারা রোপণ করেছেন সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।
জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা পুইশুর গ্রামের বাসিন্দা ইকরাম সরদার বলেন, জমি রেজিস্ট্রারি করতে এখন আমাদের কাশিয়ানী সদরে যাওয়া লাগে না। সময় এবং টাকা দুটোই সাশ্রয় হয়।
সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে আমার বেতন হয়। জনগণের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে অফিস নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ঝুঁকি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এবং হুমকি-ধমকি শুনতে হয়েছে। তবে স্থানীয় কিছু লোকের সহযোগিতায় এ কাজ করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, আমি একজন মাধ্যমিক স্কুলের বিএসসি শিক্ষকের সন্তান। আমার বাবা প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস যে মানের ছাত্র ছিলেন ইচ্ছে করলে তখন বড় আমলা হতে পারতেন। ১৯৬১ সালে তিনি মেট্রিকুলেশনে ১ম বিভাগে পাশ করেন যা শুধু আমার নিজ উপজেলা টুঙ্গীপাড়াই নয় আশপাশের জেলাগুলোতেও বিরল।
শুনেছি বাবাকে ওই সময়ে আশপাশের অনেক এলাকা থেকে দেখতে এসেছিলো। আমি জিটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ( টুঙ্গীপাড়া) এর ফার্সট বয় ছিলাম। ৮০ ভাগ নম্বর পেয়ে এসএসসি পাশ করেছি। আমার একমাত্র ছোটভাই স্বপন কুমার বিশ্বাস সে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সহকারী পরিচালক সেও মানবিক বিভাগ থেকে ৭৮৬ নম্বর পেয়ে গ্রেটার গোপালগঞ্জের মধ্যে প্রথম হয়েছিলো। আমাদের দু’ভাইকে তো কেউ দেখতে আসেনি। আমার বাবা বিএসসিতেও প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন। কিন্তু সম্পদের প্রতি তার কোনো মোহ ছিল না। আমাদের গ্রামের ছাত্রদের তিনি বিনা পয়সায় পড়াতেন। এমন কি তার অবসরে যাবার পরও আমাদের বাড়ির পাশে নব নির্মিত শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় গণিত, পদার্থ ও রসায়ন পড়াতেন। তিনি সে স্কুলের বিদ্যুৎসাহী ও ছিলেন। সংসদে চাকরি হওয়ার আগে আমার ছোটভাই গোপালগঞ্জে এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলো। পরে ৩০ তম বিসিএস দিয়ে সংসদ সচিবালয়ে আছে। শিক্ষক থাকাকালীন সেও এই স্কুলে অনেক শ্রম দিয়েছে। মানুষের ভালো করার ইচ্ছা থাকলেই করা সম্ভব।
সবচেয়ে আনন্দের এবং কষ্টের স্মৃতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সবচেয়ে আনন্দ যে- আমি এমন একজন বাবার সন্তান যিনি তার জীবদ্দশায় কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেননি। আর কষ্টে আমার বুকটা ভেঙে যায় যখন দেখি তার দু’টি সন্তানই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু তিনি নেই।
তিনি বলেন, আমার বাবার মত আমাদেরও কোন উচ্চাভিলাষ নেই। আমি একটা কথায় বিশ্বাস করি যে- মানুষের সেবা করার মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি তা আর কোনও কিছুতে নেই। আমি সেটুকু করার জন্য আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জনগণের ভোগান্তি কমানোর জন্য কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে মূল দলিল ফেরত পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো, এখন মাত্র ৩-৫ মাসের মধ্যে তাদের মূল দলিল পাচ্ছেন। তাছাড়া ৫২ ধারার রশিদে জেলা রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিয়ে এক সিল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেখানে অফিসের একটা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে জনগণ তাদের প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএসএম মাঈন উদ্দিন বলেন, আমরা রামদিয়ায় যে সাব রেজিস্ট্রার অফিস করেছি। এটা আগে ঘোষণা করা ছিল। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে হয়নি। অবশেষে সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের উদ্যোগে অফিসটি হয়েছে। ফলে জনগণ ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
এসএম/আরএ