শিল্পচর্চার ওপরে কোনো ধরণের একাডেমিক সার্টিফিকেট না থাকলেও নিঁখুত কর্মদক্ষতায় কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রতিমা তৈরির কারিগর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তাই কাঁদা-মাটি ও মেধা-কর্মদক্ষতার গুনে আর পেছনে তাকাতে হয়নি জয়দেবকে।
চলতি মাসেই উদযাপিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মানুষ্ঠান দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় জয়দেব পালের তৈরি প্রতিমায় যশোর শহরের নামকরা মন্দিরসহ ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩৬টি মণ্ডপে পূজা হবে। গতবছরেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৭টি মন্দিরে জয়দেব পালের তৈরি প্রতিমায় পূজা হয়েছিলো। এছাড়া প্রতিবছর অর্ধশতাধিক কালী প্রতিমা এবং তিন শতাধিক সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেন জয়দেব পাল।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর) যশোর শহরের বেজপাড়া মন্দিরে গিয়ে বেশ কর্মব্যস্ততা দেখা যায় জয়দেব পালকে। চলতি বছর তিনি ৩৬টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য শেষ মুহুর্তে প্রতিমায় রং এবং সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। বেজপাড়া মন্দির দেখা যায় ৩৬ দুর্গা মন্দিরের জন্য দেবী দুর্গা ছাড়াও গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও মহাদেব মিলে শতাধিক প্রতিমা তৈরি করেছেন। আর জয়দেবের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন আরও ছয়জন।
শরীয়তপুর জেলার ড্যামুডা উপজেলার কাইলরা গ্রামের জোগেন্দ্র পালের ছেলে জয়দেব পাল বাংলানিউজকে বলেন, শরীয়তপুরের আদি বাসিন্দা হলেও ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি যশোরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছেন। এরআগে তিনি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করেছেন। বছরের ১২ মাস তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। এবছর প্রতিমা তৈরির জন্য ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বায়না নিয়েছেন।
এছাড়া কালী প্রতিমা তৈরিতে ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। কর্মব্যস্ততা বাড়ায় এখন আর মন্দিরে-মন্দিরে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে পারেন না। তাই সব প্রতিমা যশোর বেজপাড়া মন্দির কম্পাউন্ডে তৈরি করেন। পূজার এক-দুই দিন আগে পিকআপযোগে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিমা পৌঁছে দেন তিনি।
জয়দেব পাল আরও বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেজপাড়া, ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কোটচাঁদপুরসহ ৩৬টি মন্দিরের জন্য প্রতিমা তৈরি করেছেন। ৫-৬ মাস আগেই তিনি এসব প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন শেষ মুহুর্ত্বে সাজসজ্জার কাজ চলছে।
জয়দেব পালের সহযোগী সাতক্ষীরার আশাশুনির বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস, শংকর মন্ডল, সুধাংশু, কালীদাস মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, বছরের ছয় মাস তারা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা বেতনে জয়দেব পালের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। এ ছয় মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে তাদের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। বাকি ছয় মাস বাড়িতে শোলার টোপর (বিয়ের জন্য ব্যবহৃত) তৈরি করে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে তারা ভালোই আছেন বলে জানান।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপাংকর দাস রতন বাংলানিউজকে বলেন, জয়দেব পালের কর্মদক্ষতায় তিনি যশোরাঞ্চলে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তার শিল্পকর্মে মুগ্ধ এ অঞ্চলের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
ইউজি/ওএইচ/