কোনোভাবেই কুষ্টিয়ার আলোচিত সদর সাব রেজিস্ট্রার নূর মোহম্মদ শাহ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে একদিকে যেমন পরিবারের সদস্যরা হতাশ অন্যদিকে সচেতন নাগরিক সমাজও বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
সাব-রেজিস্ট্রার নুর মোহাম্মদ শাহ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা ছিল, কিভাবে এবং কেনইবা তাকে হত্যা করা হয় এমন সব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ফারুকসহ ৪ জনকে আইনের আওতায় নেওয়ার পর এমনটিই নিশ্চিত হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ।
রোববার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের সভা কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটিই নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত।
তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ৪ জনের একজন নিহত নুর মোহম্মদের পিয়ন ফারুক, রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবীশ সাইদুল, মিরপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন কামাল ও বাবুল নামের অপর এক ব্যক্তি।
এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম।
পুলিশ সুপার জানান, রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় ক্ষোভ ছিল তাদের মধ্যে। এছাড়া নুর মোহাম্মদ কুষ্টিয়া থাকলে তাদের সব আয়ও বন্ধ হয়ে যাবে, এসব ক্ষোভ থেকে তারা নুর মোহাম্মদকে খুন করতে ওই ফ্লাটে যায়। এরপর টাকা পয়সা না পেয়ে হাত-পা বেঁধে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যার ৪ দিন পর ১৩ অক্টোবর রাতে শহরের হাউজিং থেকে জড়িত কামালাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ফারুক, সাইদুল ও বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আরো তথ্য জানার জন্য তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রশি, গামছাসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার নুরানী ফেরদৌস, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সাব্বিরুল ইসলামসহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর শহরের বাবর আলী গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হন সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার নুর মোহাম্মদ। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে পরদিন মডেল থানায় মামলা করেন। নিহত নুর মোহাম্মদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার মৌলা গ্রামে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মোটিভ উদ্ধারে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নামে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সাব্বিরুল আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ দিনরাত কাজ করেন। তাদের তৎপরতার কারণেই দ্রুত সময়ের মধ্যে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহির স্যার’র নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করি। তাদের সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় গোয়েন্দা পুলিশের সব সদস্য মাঠে নেমে পড়ে। দিন রাত হত্যাকাণ্ডের কারণ ও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে কাজ করা হয়। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণেই খুব দ্রুততার সঙ্গে হত্যাকারীদের চিহ্নিত এবং কারণ উদঘাটন করা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
আরএ