ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রস আর গুড়ের আবাহনে চলছে শীতের প্রস্তুতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৮
রস আর গুড়ের আবাহনে চলছে শীতের প্রস্তুতি গাছ থেকে রস পেড়ে আনছেন এক গাছি-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: পঞ্জিকার পাতায় ঋতু হিসেবে এখন হেমন্তকাল। তবে এরইমধ্যে ভোরের স্নিগ্ধ কুয়াশায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীত এলেই পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়। অগ্রহায়ণে মাঠের সোনারঙা ধান দেখে হাসি ফুটে কৃষকের মুখে। নতুন আমন ধান কাটার পর শুরু হয় নবান্ন উৎসব। কোমরে দড়ি, হাতে কাস্তে নিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা। আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়িত ছবি এটি। 

বাংলার প্রকৃতি এতোটাই বৈচিত্র্যময়, যেখানে প্রতিটি ঋতুই ধরা দেয় আলাদা সৌন্দর্যে। বর্ষার বৃষ্টি আর শীতের কুয়াশা ভিন্ন অনুভূতি যোগায় মানুষের মনে।

প্রকৃতিতে যখন শীতের আমেজ তখন ভাপ ওঠানো পিঠার মজাই যেন একটু আলাদা।  

সেই পিঠা তৈরির অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড় বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুরের গুড় ছাড়া শীতকালে পিঠা-পায়েস তৈরির কথা যেনো ভাবাই যায় না। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতে তাই খেজুর গুড় তৈরির ধুম পড়ে যায়। গাছিরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রস সংগ্রহ, রস গরম ও গুড় তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। রাজশাহীর খেজুরের গুড় সুন্দর ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য প্রসিদ্ধ। খেজুরের গুড়ে আখের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। শীতকালে গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস একটি জনপ্রিয় পানীয়।  

রস জ্বাল দেওয়ার জন্য পাত্রে ঢালছেন গাছি-ছবি-বাংলানিউজএছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মিঠাই, মণ্ডা, সন্দেশ ও রকমারি পিঠা তৈরি করা হয়। এই গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা ও পায়েস খুবই সুস্বাদু। কিন্তু গাছ থেকে নামানো কাঁচা রস থেকে কিভাবেই বা তৈরি হয় সেই জমাট বাঁধা সুস্বাদু গুড়? তবে আসুন তা জেনে নেওয়া যাক আজ।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ষলুয়া গ্রামের আব্দুর রশীদ জানান, গাছ পরিষ্কার করার পর প্রতিদিন গাছ কাটতে হয়, যাতে গাছে রস নিঃসরণ শুরু হয়। কোনো কোনো গাছ কাটা শুরুর তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই রস নিঃসরণ শুরু হয়। এরপর কাটা অংশের যেখানে রস নিঃসরণ শুরু হয় সেখানে একটি ইউ আকৃতির চিকন বাঁশের কাঠির আধা ইঞ্চি পরিমাণ গাছে ঢুকিয়ে দিতে হয়। ইউ আকৃতির কাঠির মধ্যদিয়ে রস ফোঁটায় ফোঁটায় গাছের ঝুলন্ত হাঁড়িতে জমতে থাকে।  

রস জ্বাল দেওয়া হচ্ছে-ছবি-বাংলানিউজউন্নত মানের খেজুরের গুড় তৈরির জন্য রস সংগ্রহের পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে রস ছেকে চুলার ওপর বসানো টিনের তৈরি কড়াইয়ে ঢালা হয়। চুলার ওপর কড়াই বসানোর সময় খেয়াল রাখতে হয়, যাতে কড়াই ও চুলার মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে। আরো খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলা থেকে বের হওয়া ধোঁয়া বাতাসে উড়ে কড়াইয়ের রসের সঙ্গে মিশে যেতে না পরে। তাহলে গুড়ে এক রকম বাজে ধোঁয়াটে গন্ধ হয়ে যাবে। রস গরম করার প্রথম অবস্থায় রসের উপরিভাগে যে গাদ ভেসে উঠে তা দ্রুতই ছাকনি বা হাতা দিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে। এরপর রস ঘন হলে হাতা দিয়ে অল্প তুলে ফোঁটা ফোঁটা করে ফেলে দেখতে হবে শেষের ফোঁটার আঠালো ভাব দেখা যায় কি না।  

গুড় তৈরি করতে এসময় কড়াইয়ের ফুটন্ত ঘনীভূত রস হাতলের সাহায্যে লাগাতার নাড়তে হবে এবং চুলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। গুড় তৈরির জন্য চুলা থেকে ঘন রস নামানোর সময় নিশ্চিত করতে চাইলে হাতলের সাহায্যে এক চিমটি পরিমাণ গুড় কিছু ঠাণ্ডা পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। দ্রুত জমাট বাঁধলে বুঝতে হবে গুড় চুলা থেকে নামানোর উপযোগী হয়ে গেছে। চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে দ্রুত গোলাকৃতি বা চারকোনা খাঁচে ঢেলে ঠাণ্ডা করতে হবে। ব্যাস গুড় তৈরি হয়ে গেলো।

প্রস্তুত হওয়া খেজুর গুড়-ছবি-বাংলানিউজএকই গ্রামের মনিরুজ্জামান জানান, মাটির পাত্রে গুড় সংরক্ষণ তুলনামূলকভাবে খরচ কম। এজন্য অধিকাংশ গুড় ব্যবসায়ী মাটির পাত্রে গুড় সংরক্ষণ করে থাকেন। কোনো কোনো এলাকায় টিনের পাত্রেও গুড় সংরক্ষণ করা হয়। এখান থেকে খেজুরের গুড় জেলার পুঠিয়া উপজেলার বড় মোকাম বানেশ্বর বাজারের পাইকারি আড়তে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আর দেশের অভ্যন্তরে খেজুরের গুড়ের চাহিদা পূরণে রাজশাহীর ভূমিকাই বেশি। কারণ দেশে রাজশাহীর গুড়ের চাহিদাই বেশি। এরপরই রয়েছে ফরিদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলা।  

জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, শীত মৌসুমে খেজুরের গুড়ের ভালো দাম পাওয়া যায়। এজন্য বাজারেও দাম বেশি থাকে। বর্তমানে খেজুরের গুড় পাইকারি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।