ভোট দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা (উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক) রুহুল আমিন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। রাত ১২টার পরে সেই রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ১০ জন মিলে ওই গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।
কিন্তু মামলায় আসামি করা হয় ৯ জনকে। বিভিন্ন কৌশল ও প্রভাব বিস্তারে ঘটনার মূল হোতা রুহুল আমিনকে ঘটনা ও মামলার কাগজপত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে ঘটনা ও মামালার গড়মিলে মূলহোতা আওয়ামী লীগ নেতাকে আড়াল করা হয়েছে।
গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই বর্বরোচিত কাণ্ডে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই রুহুল আমিনকেই (সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও চরজুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য) আসামি করা হয়নি।
ধর্ষিত গৃহবধূ ও তার স্বজনরা জানায়, ঘটনার রাতে রুহুল আমিনসহ ১০ জন হামলা চালিয়ে গণধর্ষণে অংশ নেয়। কিন্তু মামলায় তাকে বাদ দিয়ে বাকি নয় জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। সরকারের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এরই মধ্যে জানিয়েছেন, গণধর্ষণের ঘটনায় কেউ রেহাই পাবে না। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে।
এদিকে, গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে বুধবার দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি কমিটি নোয়াখালী আসে। তারা হাসপাতালে ওই নারীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। কমিটির প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর জানান, ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য ও মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন। এসময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তিন সদস্যের অন্য একটি তদন্ত দল হাসপাতালে এবং ঘটনাস্থলে যায়।
অন্যদিকে, গণধর্ষণের শিকার নারীকে দেখতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক। বুধবার রাতে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, প্রাথমিকভাবে ৯ জনকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে প্রধান আসামিসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা যে দলের বা যত প্রভাবশালীই হোক তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা পুলিশের দায়িত্ব।
এর আগে, তিনি সন্ধ্যায় ওই নারীর গ্রামের বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফসহ পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চরবাগ্গা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে চার সন্তানের জননীকে (৩২) গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী একটি দলকে (বিএনপি) ভোট দেওয়ায় বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধর্ষিতার স্বামী অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত নয় জনকে আসামি করে চরজব্বার থানায় ইতোমধ্যে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। এতে পুলিশ এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। নির্যাতিত গৃহবধূ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯
আরএ