ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দ আশরাফকে শেষ বিদায়ের অপেক্ষায় ময়মনসিংহ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৯
সৈয়দ আশরাফকে শেষ বিদায়ের অপেক্ষায় ময়মনসিংহ  সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ: ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি জন্মেছিলেন। চিরতরে চোখ বুজলেন সেই জানুয়ারির তৃতীয় দিনেই। ৬৭ বছর বয়সে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন এই কিংবদন্তি রাজনীতিক। তার মৃত্যুতে এখন গোটা ময়মনসিংহেই শোকের ছায়া। বিষণ্নতায় ভরে গেছে দলীয় নেতাকর্মীদের মুখ। 

আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানাতেই এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে তার জন্মভিটার এই শহরের বাসিন্দারা। রোববার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় শহরের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তার তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

ইতোমধ্যে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেছেন।  

কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে টানা পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন মুক্তিবাহিনীর সক্রিয় সদস্য। মৃত্যুর বছর খানেক আগেও স্ত্রী শিলা ইসলামের জন্য মিলাদ মাহফিলে দোয়া চাইতে তিনি ময়মনসিংহে নিজ বাসায় এসেছিলেন। সৈয়দ আশরাফ সেদিন মাইকে কোনও কথা বলতে পারেননি।  

এর আগে ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মা সৈয়দা নাফিজা ইসলাম ছাত্রীনিবাস এবং পরের বছর ৮ জুন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভাগীয় বিজ্ঞানমেলার উদ্বোধন করেছিলেন তিনি।  

ময়মনসিংহ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতির শহর। এখন তার অকাল প্রয়াত ছেলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতির শহর।  

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তখন এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সৈয়দ আশরাফের সঞ্চালনায় ছাত্রলীগের সভায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহৎপ্রাণ এই রাজনীতিকের শূন্যতা কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়।  

সৈয়দ আশরাফের জন্য দলমত নির্বিশেষে কাঁদছে ময়মনসিংহ। শহরের অলিগলিতে ছেয়ে গেছে তার শোকের পোস্টারে। নিপাট ভদ্র ও বিনয়ী সৈয়দ আশরাফকে হারিয়ে এখন শোকস্তব্ধ গোটা ময়মনসিংহ।  

ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করা নীতিবান সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আদর্শ, সততা ও মানবিক গুণাবলীর কারণেই জনপ্রিয় ছিলেন ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশেই।

সুবিশাল পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সুবিধাজনক ও দায়িত্বশীল অনেক পদে থেকেও অর্থবিত্ত আর বৈভবের পেছনে ছোটেননি। এই নেতার দৃঢ়তাপূর্ণ ক্যারিশমাটিক কর্মযজ্ঞে নিন্দুকেরাও মোহিত হতেন।

নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমনটিই মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।  

শোকস্তব্ধ কন্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সততার মূর্ত প্রতীক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গোটা বিশ্বেই রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সততার বিরল এক উদাহরণ। গর্বে বুক ভরে যায় আমার নিজের শহর ময়মনসিংহেই তার জন্ম। ’ 

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের সহকর্মী আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি হামিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিজেকে কীভাবে সৎ রাখা যায়, সেদিকটিই আমাদের দেখিয়ে গেছেন সৈয়দ আশরাফ। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করতো। ’

** ময়মনসিংহে শোকস্তব্ধ সৈয়দ আশরাফের বাড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।