ঘরে ডেকে প্রথমে শিশু দু’টিকে নিজের স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে সাজান মোস্তফা। এরপর তারা দুই ভাই মিলে ইয়াবা সেবন করে শিশু দু’টিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
বুধবার (৯ জানুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন।
সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাতে ডেমরার কোনাপাড়ার শাহজালাল রোডের নাসিমা ভিলার নিচতলার একটি কক্ষ থেকে ফারিয়া ও নুসরাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) দিনগত রাতে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামি মোস্তফা (২৮) ও আজিজুলকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়।
ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নাম করে শিশু দু’টিকে প্রথমে বাসায় ডেকে আনা হয়। এরপর আজিজুল ও মোস্তফা ইয়াবা সেবন করে উচ্চশব্দে গান ছাড়েন। পরে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে। চিৎকারের এক পর্যায়ে ফারিয়াকে গলা টিপে হত্যা করেন আজিজুল এবং নুসরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মোস্তফা।
হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যান আর মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ নিয়ে বাসায় থাকেন। এক পর্যায়ে খাটের নিচে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন।
মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় স্বামী-স্ত্রীর চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন টের পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মোস্তফা পালিয়ে যান।
মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিতে কাজ করতেন।
ডিসি বলেন, শিশুরা চিৎকার করলেও উচ্চশব্দে গান বাজানোর কারণে বাইরের কেউ শুনতে পায়নি। শিশু দু’টি নার্সারিতে পড়তো। স্কুল শেষে এলাকায় দু’জন ঘোরাঘুরি করছিল। এ সময়ই তাদের সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেন মোস্তফা।
ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত কিনা জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মোস্তফা ফোন করে আগেই আজিজুলকে বাসায় ডেকে নেন। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে পূর্ব কোনো পরিকল্পনা ছিল। তারা একে অপরের মামাত-ফুফাত ভাই।
তিনি আরো বলেন, এটি বিকৃত মানসিকতা থেকে হচ্ছে। তাছাড়া মাদকাসক্তি এর বড় কারণ। আর যে সমস্ত জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন।
পুলিশ বলেছিল দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুক্তিপণের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে। জানতে চাইলে ডিসি বলেন, মুক্তিপণের বিষয়টি এজন্য মনে হয়েছিল যে, আসামিরা মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসা করতেন। তাদের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় ডাকাতি মামলাও আছে। পুলিশের ধারণা ছিল যে, মাদকের টাকার জন্য হয়তো মুক্তিপণ চেয়ে থাকবে।
আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ ও আলামত সরবরাহ করে পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৯
পিএম/এএ