ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মহাসড়ক তো নয়, যেন বালুমহাল!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
মহাসড়ক তো নয়, যেন বালুমহাল! ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে ফেলে রাখা হয়েছে বালু, ছবি: অনিক খান

ত্রিশাল, ময়মনসিংহ ঘুরে এসে: ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে যত্রতত্র দাঁড়ানো ট্রাক। এসব ট্রাককে ঘিরে ব্যস্ত চালক-শ্রমিকরা। প্রতিটি ট্রাক থেকেই নামানো হচ্ছে সিলিকা বালু।

সড়কটির দু’পাশেই বালু স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। প্রথম দেখাতেই মনে হতে পারে এটি যেন বালুমহাল বা স্টক ইয়ার্ড! কিন্তু বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলা গতি দানবের শব্দে ঘোর কেটে যাবে মুহুর্তেই! ব্যস্ততম মহাসড়ক দখল করে রীতিমতো ট্রাকস্ট্যান্ড বা বালুমহালে রূপ দেওয়ার এই চিত্রটি ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চুরখাই বাজার এলাকার।

স্থানীয় ট্রাকচালকরা সিন্ডিকেট করে মহাসড়ক দখলের মাধ্যমে বালু ব্যবসার এই রমরমা কারবার করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। চালকদের এই মহাসড়ক গিলে খাওয়ার প্রবণতায় প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো যানবাহন। ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে রাখা হয়েছে বালু ও ট্রাক, ছবি: অনিক খানওই বাজার এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একাধিকবার এই কারবার বন্ধের দাবি জানিয়ে তাদের কাছে হেনস্তারও শিকার হয়েছেন। ফলে পুনরায় আর মুখ খুলতে সাহস করছেন না তারা।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই স্পট ঘুরে এসব চিত্রের দেখা মেলে।  

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক বালুভর্তি ট্রাকে করে এনে এখানে আনলোড করছেন চালকরা। পরে প্রতি ট্রাক বালু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় সরবরাহ করছেন ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায়।

তাদের অভিযোগ, সদর উপজেলার চুরখাই বাজার এলাকায় মহাসড়কের দু’পাশের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশের  সাইড লাইন দখল করে অবৈধভাবে ট্রাক পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি এখানে যত্রতত্রভাবে ট্রাক রেখে সংকুচিত করা হচ্ছে মহাসড়ক। বিঘ্ন হচ্ছে যান চলাচল।

স্থানীয় চুরখাই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪০) বাংলানিউজকে জানান, দিন-রাত এলোমেলোভাবে ট্রাক রেখে নিজেদের ইচ্ছামতো মহাসড়ক দখল করে বালু ফেলা হয়। একেকজন চালকের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকার ব্যবসা করেন। তাদের কারণে মহাসড়কের দু’পাশের আকার ছোট হয়ে এসেছে।

ট্রাকচালকদের বালু ফেলার কৌশলের বিবরণ দিয়ে স্থানীয় চা দোকানি শরীফুজ্জামান (৩২) বাংলানিউজকে জানান, ট্রাকচালকরা দূর-দূরান্তের পার্টির (ক্রেতা) কাছ থেকে বালু’র অর্ডার নেন। এরপর তারা ট্রাকে করে আনা অতিরিক্ত বালু এখানে মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে যান।

বাকি অংশটুকু পার্টিকে (ক্রেতাকে) সরবরাহ করেন। এভাবে কয়েকজন ট্রাকচালক মিলে প্রতিদিন কমপক্ষে এক ট্রিপ বালু’র ব্যবসা করছেন।

দু’দিন আগে মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই মহাসড়কের চুরখাই পয়েন্টে অবৈধ কোনো স্থাপনা না থাকলেও ট্রাক ব্যবসায়ীদের কৌশলের করতলে পড়েছে মহাসড়কটি।

স্থানীয় কনফেকশনারি দোকানি কামরুল ইসলাম (৪০) অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কের দু’পাশ দখল করে ট্রাক রাখা এবং বালু’র স্তুপ করার ফলে স্থানীয় পথচারীদের এই পয়েন্ট দিয়ে হেঁটে চলারও কোনো জো নেই। আমরা প্রতিবাদ করলে তাদের (ট্রাক চালকদের) হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মহাসড়কে যানজটের জন্য বাসচালকদের উল্টো দায়ী করে স্থানীয় ট্রাকচালক (ঢাকা মেট্রো ট-২২-১৭১৫) আবুল কালাম (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়কঘেইষা (ঘেঁষে) বালু ফেলাই। কিন্তু এই লেইগ্যা (জন্য) কোনো যানজট অয় (হয়) না। যানজট অয় (হয়) কোস্টারের (বাস) লেইগ্যা (জন্য)।

গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের এমন দখলবাজির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাননীয় সড়কমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হচ্ছে। এখানে ট্রাকস্ট্যান্ড বা বালু ফেলে রাখালে সেগুলোও উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে। মহাসড়ক যাতে সংকুচিত না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এমএএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।