পুরান ঢাকার চকবাজারে পাঁচটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ হওয়া সন্তানের খোঁজে এভাবেই সাংবাদিকদের সামনে কাকুতি-মিনতি করছিলেন এক মা। কাঁদতে কাঁদতে তিনিই জানাচ্ছিলেন, তার ছেলের নাম রুহান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ সেমিস্টারে পড়ছিলেন।
এটিএন নিউজের সাংবাদিক মুন্নী সাহার কাছে ওই মা বলছিলেন, ‘আমার একটাই সম্পদ, অনেক কষ্ট কইরা লেখাপড়া করাইছি। আমার বাবা বাইরে যাইবো গা। ...’
আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, ‘আমার বাবা আইবো?’ কাতর স্বরেই বলতে থাকেন, ‘আমার বাবারে একটু আইনা দেন না। ’ এসময় কলিজার টুকরা সন্তান রুহানের পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি সবাইকে দেখাচ্ছিলেন তার মা।
তখনো তার ছেলের পরিচয় জানা ছিল না বিধায় পাশ থেকে কেউ একজন জানতে চাইলে মা বলেন, ‘আমি সব কমু, বিরক্ত অমু না। আমার বাবার লাইগা সব কমু। আমার বাবার নাম রুহান। নর্থ সাউথ ভার্সিটিতে পড়ে। ফোর্থ সেমিস্টারে উঠছে। ’
ছবির ওপর হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, ‘আমার বাবা। কোনো আড্ডা-ফাড্ডা দিতো না। আমার বাবা ভার্সিটি থেকে আওয়ার সময়, কী অইছে আমার বাবার?’
পাশে দাঁড়ানো কোনো একজনকে ডেকে বলছিলেন, ‘আমার বাবার লাইগা এতো কথা বলতেছি, আমার বাবারে আইনা দিবোনি?’
সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘সম্ভব হইলে কোনো জায়গায়, মনে হয় যে কোনো জায়গায় আছে... এখনো শেষ হয় নাই, কোনো জায়গায় মনে হয় যে দমটা এখনো টিপটিপ করতেছে, কিন্তু পলিথিন দিয়া ঘুইরা থুইছে, কিন্তু আমার পোলাডা মা মা কইতাছে। টিপটিপ করা অবস্থায় কি পলিথিন দেয়, কেউ দিবো?’
এই সময় মুন্নী সাহা, আশপাশের লোকজনকেও অশ্রু মুছতে দেখা যায়। মা বলতে থাকেন, ‘আমার আব্বা এতো সহজে যাইবো না আমারে রাইখা। আমার বাবাতো অনেক ভয় পায়, আমার বাবায় কোনহানে জানি আছে। ’
সবাইকে আবার দেখাচ্ছিলেন তার ছেলের পাসপোর্ট সাইজ ছবিটা, ‘যেরকম হোক... কালি হোক, একটু যদি মাংস থাকে, মাংসের ফোঁটাও থাকে। আমার বাবার কাছে, একটা মাংসের ফোঁটা...। আমার বাবারে আমি এমনে কোলে নিমু (শিশুকে দু’হাতে বুকে জড়ানোর ভঙ্গি করে)। দরকার হয় আমি ছালি (ছাই) ধরমু, এমনে গায়ে মাখুম। বাবারে চুম্মা দিমু। ’
রুহানের ছবির দিকে তাকিয়েই মা বলতে থাকেন, ‘বাবারে, তোমার কিছু অইবো না। ’ আবার সবাইকে ছেলের ছবি দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘সবাই তোমারে খুঁজে দিবো। ইনশাল্লাহ সবাই খুঁজে দিবো। কতো মানুষ...কোন দিকে সরায়ালায়, কোন দিকে যায় গা। ’
‘আমার বাবারে একটু খুঁইজা দেন না’ বলে প্রায় গড়িয়ে পড়ছিলেন মা।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। হদিস মিলছিলোনা রুহানসহ কয়েকজনের।
স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এইচএ