সমসাময়িক প্রেক্ষাপট, দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন কারাবন্দীদের দশাসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আসলে কোথায় রয়েছে? এ নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। সঙ্গে ছিলেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ডি এস সৌরভ।
বাংলানিউজ: ‘বিনাবিচারে’ কারাবন্দী বলে যে অভিযোগ আছে, এমন বন্দী কতোজন রয়েছে বলে আপনাদের কাছে তথ্য আছে?
কাজী রিয়াজুল হক: বিষয়টি আসলে ‘বিনাবিচারে’ বলা ঠিক নয়। একটি মামলা হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একজন আসামি হয়ে কারাগারে যায়। যখন কারাগার পরিদর্শনে যাই তখন তাদের (কারা কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে তথ্য নেই, কতোজনের শাস্তি হয়েছে আর কতোজনের হয়নি বা বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে- এটিকে বিনাবিচারে বলা যায় না।
বাংলানিউজ: জাহালম, বাদল ফরাজীর মতো দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে যাওয়া কতোজনকে সাহায্য করতে পেরেছেন?
কাজী রিয়াজুল হক: বিভিন্ন সময় কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে যখন বৃদ্ধ, নারী, বয়স্ক, দীর্ঘদিনেও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি এমন কাউকে দেখি, তখন বলি- কারাবন্দীদের দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করা হোক। আর যারা প্রবীণ রয়েছেন; পালিয়ে যাবেন না বা বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন না- এমন ক্ষেত্রে অজামিনযোগ্য ঘটনায়ও আদালত জামিন বিবেচনা করতে পারেন বলে বলি।
বাংলানিউজ: বাদল ফরাজীকে কি আদৌ মুক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন?
কাজী রিয়াজুল হক: বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতের মধ্যে একটি পারস্পরিক চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে ভারত থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে কাগজপত্র না দেখে বলা কঠিন আমরা বাদল ফরাজীকে কেমন সাহায্য করতে পারবো। সামনে ভারত যাবে তদন্ত দল, তারাও অনুসন্ধান শেষ করবে। আমি ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে ও আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে বসবো, এ বিষয়ে তাদের অনুরোধ করে আসবো। আইনি প্রক্রিয়ায় যা করার ভারতেই করতে হবে তার জন্য।
বাংলানিউজ: মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথম দশ মাসে ৪৩৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে...
কাজী রিয়াজুল হক: মানুষের মূল মানবাধিকারের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রথম দায়িত্ব তাকে রক্ষা করা। সেটা তারা কখনো কখনো রক্ষা করে, আবার অভিযোগও আসে। প্রত্যাশা থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবার অভিযোগ আমলে নিয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে, মানবাধিকার অক্ষুণ্ন রেখে।
বাংলানিউজ: অন্য বছরের তুলনায় এবারের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু আক্রমণ কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা যায়নি, কিভাবে দেখেন?
কাজী রিয়াজুল হক: এখন মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন, তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। কিছু কিছু স্থানে হেরফের হয়েছে, তবে মুক্তমতের নির্বাচন হয়েছে। মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে।
বাংলানিউজ: সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা কী মুক্তমত চর্চা করতে পারছেন?
কাজী রিয়াজুল হক: সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ট ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশ করবেন। এরপরও কিছু কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সরকারের উচিৎ গণমাধ্যমের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
বাংলানিউজ: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক সময়ে পাশে দাঁড়ালো বাংলাদেশ। এখন কি রোহিঙ্গারা যথার্থ মানবিক মর্যাদা পাচ্ছে?
কাজী রিয়াজুল হক: আমি ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। তারা এখানে যথেষ্ট ভালো আছেন। তাদের যা যা দরকার মানুষ হিসেবে তা করা হয়েছে, যা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মানবাধিকারের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে, তারাও কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলানিউজ: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় মানবাধিকারের উপেক্ষিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ শোনা যায়...
কাজী রিয়াজুল হক: দেখুন, কফি আনানের একটি সুন্দর উক্তি রয়েছে- ‘উন্নয়ন ছাড়া নিরাপত্তা অর্থহীন এবং নিরাপত্তা ছাড়া উন্নয়ন অর্থহীন। ’ আমাদের দু’টোই প্রয়োজন সমানতালে এগিয়ে যাবার জন্য।
বাংলানিউজ: স্বাধীনতার অনেক বছর হলো। বৈশ্বিক নানান সূচকে বাংলাদেশকে ওপরের দিকে স্থান করে নিতে দেখা গেছে, মানবাধিকারের সূচকের ক্ষেত্রে কি পিছিয়ে পড়ছে?
কাজী রিয়াজুল হক: বিশ্বের মানবাধিকারের জন্য যে নয়টি সনদ আছে তার আটটিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বহু দেশই তা করেনি। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এগুলো দূর করতে পারলে একটি সুন্দর দেশে পরিণত হতে পারবো আমরা। বাংলাদেশ জাতিসংঘে এই নিয়ে চারবার হিউম্যান রাইটস এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বার হয়েছে। এবার ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত থাকবে দায়িত্বে। যা দেশের জন্য বিশেষ মর্যাদার।
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
কাজী রিয়াজুল হক: আপনাকে ও বাংলানিউজকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
ডিএসএস/এইচএ/