ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘বইওয়ালা’ পলান সরকার আর নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৯
‘বইওয়ালা’ পলান সরকার আর নেই হারেজ উদ্দিন ওরফে পলান সরকার/ফাইল ছবি

রাজশাহী: রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বইপড়া আন্দোলন গড়ে তুলে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকার আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। 

দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগে শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা বাউসার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পলান সরকার মৃত্যুকালে ছয় ছেলে, তিন মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর তার স্ত্রী রাহেলা বেগম (৮৫) মারা যান। তার মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  

বাঘার বিঘা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক গোলাম তোফাজ্জেল কবির মিলন বাংলানিউজকে পলান সরকারের প্রয়াণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এ সমাজকর্মীর জানাজার নামাজ শনিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় বঘার বাউসা হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর স্থানীয় গোরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে। তার ছেলে হায়দার আলী বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তিনি ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। আর্থিক টানাপোড়েনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় পলান সরকারকে।  

তিনি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন রাজশাহীর ২০টি গ্রামে অভিনব শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলে। নিজের টাকায় বই কিনে পলান সরকার পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেক দিন একেক গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করে যাওয়া পলান সরকার তাই এলাকাবাসীর কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘বইওয়ালা দুলাভাই’ হিসেবে।

তিনি স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও ছিলেন। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে তার মহৎকর্ম প্রচারিত হয় জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়।

সমাজ গঠনে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পলান সরকার ২০১১ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।  

এক শোক বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলান সরকারের মৃত্যুতে জাতি একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মীকে হারালো। তার অবদান রাজশাহীর মানুষসহ বাঙালি জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
এসএস/এসএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।