শুক্রবার (০১ মার্চ) সন্ধ্যায় শাহ আব্দুল করিম স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে বাউল সম্রাটের বাড়ি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ লোক উৎসব।
উৎসবে আলোচনা সভায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একমাত্র ছেলে শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও শাহ আবদুল করিম স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ আপেল মাহমুদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সমবায় কর্মকর্তা রাজমনি সিংহ, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোয়েব হাসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ চৌধুরী, অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাহিদ আহমদ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিমের ভক্তদের অংশ গ্রহণে গানের অনুষ্ঠান। রাতভর চলবে গান ও আব্দুল করিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ।
এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করতে ঢাকা থেকে এসেছেন সঙ্গীত শিল্পী শাহনাজ বেলী ও সিলেট থেকে এসেছে শিশু শিল্পী মাহফুজুর রহমান।
স্থানীয় বাউল আব্দুর রহমান, রনেশ ঠাকুর, সিরাজ উদ্দিন, ফয়সাল শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক মরমী ও সারি গান পরিবেশন করবেন।
তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় তার জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ২০০৬ সাল থেকে ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ১৪ম লোক উৎসব হচ্ছে।
বাউল সম্রাটের ছেলে ও উৎসব আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শাহ নুরজালাল বাংলানিউজকে বলেন, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের অতিথিরা বাউল সম্রাটের জীবন নিয়ে আলোচনা ও দেশের বিখ্যাত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করছেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসে পৌঁছেছেন।
তবে আমরা এখন উৎসব নিজ উদ্যোগে করছি। কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছি না।
শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাকেন্দ্রে কয়েকদিন গেলেও পরে অভাবের তাড়নায় তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। স্কুল ছেড়ে হয়ে যান গৃহস্থের বাড়ির রাখাল। পড়াশোনা না করতে পারলেও তিনি মুখে মুখে গান রচনা করতেন। তার ভক্ত ও ছেলে এই গান লিখতেন।
আব্দুল করিমের গানে ফুটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা। একুশের চেতনায় স্বাধীনতার শক্তি, বিদ্রোহী এক মানব একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।
স্বাধীনতার পর যখন বঙ্গবন্ধু দিরাইয়ে আসেন তখন তার গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেন এছাড়াও মাওলানা ভাসানীসহ দেশের অনেক বড় ব্যক্তির মঞ্চে তিনি গান পরিবেশন করেন।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৫৭’র কাগমারী সম্মেলন, ৬৯’র গণ আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র গণ অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। লোক উৎসব উপলক্ষে বসেছে গ্রামীণমেলা ও আব্দুল করিম স্মৃতি সংগ্রহশালার সামনে বিক্রি হচ্ছে আব্দুল করিমের জীবন কর্মের ওপর রচিত বই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
আরএ