দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে শহরের বুক চিরে চার লেন এবং ওই চার লেনের উভয়পাশে দু’টি দুইলেনের মহাসড়ক নির্মাণের মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। গত বছরের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, নলকা-সিরাজগঞ্জ-সয়দাবাদ সড়ক নামে এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নলকা-চন্ডিদাসগাঁতী ও একই দৈর্ঘ্যের মুলিবাড়ি-মালশাপাড়া কাটাওয়াপদা দুইলেন মহাসড়কটি হবে ৯.৭ মিটার প্রশস্ত। অপরদিকে, ৬.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চন্ডিদাসগাঁতী-কাটাওয়াপদা চারলেন মহাসড়কের প্রস্থ হবে ১৮ মিটার। এরমধ্যে দুই পাশের রাস্তার প্রস্থ ৭.৩ মিটার, মাঝখানে আইল্যান্ড ১ মিটার ও দুই পাশে ফুটপাথ কাম ড্রেন ১.২ মিটার করে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭২ কোটি টাকা, বিদ্যুতের পোল, গাছ ও স্থাপনা অপসারণ (ইউটিলিটি) ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা এবং মূল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১৪৮ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হবে।
প্রকল্পটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তূর্ণা এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সিডিউল অনুযায়ী গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। এতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্মকর্তাগণ ছাড়াও এলাকাবাসীও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। জমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুতের পোল ও গাছ অপসারণের কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মেয়াদের আগেই কাজটি সম্পন্ন হবে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বাংলানিউজকে বলেন, গত ১১ মাসে এ প্রকল্পটির ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখনও ২০ মাস সময় আমাদের রয়েছে। মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হবে। বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ অপসারণ এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য টাকা দেওয়া হলেও এসব কাজ ধীরগতিতে চলছে। সম্প্রতি জেলা সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুতগতিতে এগুলো অপসারণ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথ সুগম করবে। এদিকে, নির্মাণাধীন এ মহাসড়কটিকে ঘিরে উন্নয়নের নব দিগন্তের স্বপ্ন দেখছে সিরাজগঞ্জবাসী। সড়কটির কারণে অন্যান্য সব উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে সিরাজগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন সচেতনরা।
শহরের ব্যবসায়ী বাছেদুর রহমান বাচ্চু, শহীদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল করিম, পেশাজীবী আল-আমিন, হাসান ফরিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ইমরান মুরাদ, শ্রমিক নেতা আনছার আলীসহ আরও অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, নিন্মমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে ছিলো সিরাজগঞ্জ। উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে নিজ জেলা শহর বাদ দিয়ে পাশ্ববর্তী বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা ও নাটোর জেলা শহরে যাতায়াত করতেন। কোর্ট-কাচারি আর অফিসিয়াল কাজ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো কখনো শহরমুখী হতেন না। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে জেলা শহরটি।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সিরাজগঞ্জের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন ফোরলেন মহাসড়ক। এ দুটি মেগা প্রকল্পে জেলা শহরের চিত্র পাল্টে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৯
এনটি