সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পিলারের কাজ প্রায় শতাভাগ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ২৫৬টি পাইল, ১৬০টি কলামের কাজ পুরোপুরি প্রস্তুত।
প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এমএস আকতার বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অধিকাংশ পিয়ারে ক্যাপ বসিয়ে ফেলেছি। নতুন করে আই গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আমাদের আর কোনো সমস্যা নাই। সব সমস্যা কাটিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রথম ধাপের কাজ ৫০ শতাংশ হয়ে গেছে। এরপরেই শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। প্রথম ধাপে ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ১৯১ জন। দ্বিতীয় ধাপে ৭৯৪ এবং তৃতীয় ধাপে ৩৯৪ জন। তিন ধাপে ১ হাজার ৩৭৯ জন পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। প্রকল্পের আওতায় সব মৌজায় জমির দাম এক নয়। কোথাও শতক প্রতি ৫৫ লাখ টাকা, কোথাও আবার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দরে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, পুনর্বাসন বাবদ ৯৯৫ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি রিলোকেশন বাবদ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নানা কারণে দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মধ্যে গেটওয়ের সংযোগ উন্নত হবে। এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরে উন্নত পর্যায়ের সেবা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এটি আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নত করবে। যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন খরচ হ্রাস। তাছাড়া ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে এ প্রকল্প।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলি-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।
চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে যানজট দূর হবে। প্রকল্পের রুটগুলো হচ্ছে- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল- বনানী-মহাখালী-তেঁজগাও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট।
এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে ইতাল-থাই। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, বাস্তবায়নের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে।
২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল স্বপ্নের এ প্রকল্পটি। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাতে তৃতীয়বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
সব খাত মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে মূল প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ২ হাজার ২৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড (ভিজিএফ) হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। তৃতীয় ধাপে মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সরকার ২ হাজার ৭৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংস্থান করতে পেরেছে। বাকি ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) খাতের।
দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ ধাপে মগবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। বসত বাড়িসহ কিছু স্থাপনা রয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ জমি অধিগ্রহণ এবং বসতবাড়ি সরানো।
প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এমএস আকতার বাংলানিউজকে বলেন, পুরো প্রকল্প এলাকায় সব চ্যালেঞ্জিং কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপ চলতি বছরের মধ্যেই উন্মুক্ত হবে। পরবর্তী ধাপের কাজে কোনো ধরনের বাধা নেই। ঝামেলাপূর্ণ কাজ এখনই শেষ করে ফেলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৯
এমআইএস/এসএইচ