কেন এসেছেন জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, প্রায় চার বছর আগে বিআরডিবি, ফুলগাজী শাখার মাঠকর্মী আনোয়ারা বেগম তার থেকে কাগজে একটি টিপসই নেন। তাকে ৪০ হাজার টাকা দেবেন বলে জানান।
জানা গেছে, ফুলগাজীর পল্লী দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি (পদাবিক) বিআরডিবির আওতাভুক্ত দরিদ্র ও বিত্তহীন নয়টি দলের ১৫৩ সদস্যের ৩৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা আতসাৎ করে ফিরিয়ে দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেন বিআরডিবি’র মাঠ সংগঠক আনোয়ারা। এখন সেই টাকা ফিরে পেতে বিআরডিবি অফিস চাপ দিচ্ছে দরিদ্র ১৫১ সদস্যকে। এমন পরিস্থিতিতে উপায়ান্তর না খুঁজে পেয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
টাকা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা। রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা বিআরডিবির অফিসের সামনে পদাবিকভুক্ত সমবায় সমিতি/দলের সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন।
ভুক্তভোগী মমতাজ সাহা জানান, টাকা আত্মসাৎ করে আত্মহত্যা করেন ফুলগাজী উপজেলার বিআরডিবির মাঠ সংগঠক আনোয়ারা। কিন্তু বর্তমানে বিআরডিবি’র অফিসাররা আমাদের টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
মানববন্ধনকারীরা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, এই টাকা কোথায় থেকে দিবো। এখন তো আমাদেরও মরতে হবে। ’
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, তাদের অনেকে এটাও জানেন না যে, তাদের নামে বিআরডিবি থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও স্বাক্ষর কোথায় থেকে আসলো প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী একজন জানান, তারা অনেক আগে ঋণ নিয়েছিলেন। যা তারা পরিশোধ করে দিয়েছেন। তাদের জমা দেওয়া তথ্য দিয়ে পুনরায় আনোয়ারা ঋণ নেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা নয় বরং তিনি ১৫৩ জনকে মেরেও গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, কাগজপত্র এবং বিভিন্ন তথ্যাদি পর্যালোচনা করে আনোয়ারা টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়।
বিআরডিবির এ.আর.ডি.ও. কৃষ্ণ গোপাল রায় বলেন, আনোয়ারা ছিলেন বিআরডিবির মাঠ সংগঠক। তিনি উপজেলার বিভিন্ন লোকের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতেন এবং ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায় করতেন। মৃত্যুর আগে তিনি আমাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। কোনো চাপ প্রয়োগ নয়, আমি শুধু অফিসের নিয়মমাফিক তার থেকে ঋণ আদায়ের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছি।
ভুক্তভোগী নয়টি দল হচ্ছে-বিজয়পুর, দং কিং বিজয়পুর, কিং বিজয়পুর, দ. ফতেহপুর, (মুন্সিরহাট) উত্তর প. দৌলতপুর (পুরুষ), উত্তর দৌলতপুর, বৈরাগপুর উত্তরপাড়া, পশ্চিম বসন্তপুর ও কিসমত ঘনিয়ামোড়া।
ভুক্তভোগীরা বলেন, টাকা আত্মসাতকারী আনোয়ারা তাদের টাকা নিয়ে শহরে জমি এবং সম্পদ তৈরি করেছেন। সরকার চাইলে তার পরিবারকে চাপ দিয়ে সেই সম্পত্তি বিক্রি করে গরিব মানুষগুলোকে ঋণের দায় থেকে মুক্তি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে ফেনী শহরের বারাহিপুরের ভাড়া বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বিআরডিবির মাঠ সংগঠক আনোয়ারার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুটে অভিযোগ করেন, ফেনীতে কর্মরত উপ-পরিচালক শংকর কুমার পাল ও ফুলগাজী উপজেলার বিআরডিবির এ.আর.ডি.ও. কৃষ্ণ গোপাল রায় তার মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এসএইচডি/আরআর