ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আমরা খাবো কী?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৯
আমরা খাবো কী? খাদ্য সহায়তা বঞ্চিত জেলেরা (ফাইল ছবি)

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা প্রায় ২৪ হাজার জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না। নদীতে মাছ শিকারে যেতে মানা, অন্যদিকে বিকল্প কর্মসংস্থানও নেই। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্দিনে আছেন জেলে পরিবারগুলোর। 

লক্ষ্মীপুরে সরকারি হিসাবে ৪৯ হাজার ৫৫৮ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। জাটকা রক্ষা ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দুই মাস নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল দিচ্ছে সরকার। নিবন্ধিত জেলেদের মধ্য থেকে ২৫ হাজার ৯৪৭ জন এ সুবিধা পাবেন; বাকি ২৩ হাজার ৬১১ জন জেলে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বিগত বছরগুলোতেও খাদ্য সহায়তা পাননি।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে ৭ হাজার ৫১৭ জন, খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন ৩ হাজার ২৪৫ জন। রায়পুরে ৭ হাজার ২২৩ জন; সুবিধা পাচ্ছেন ৪ হাজার ১৯৬ জন। কমলনগরে ১৪ হাজার ১০০ এর মধ্যে ৭ হাজার ১৪১ জন জেলে চাল নেবেন ও রামগতি উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে ২০ হাজার ২১৮ জন, কিন্তু খাদ্য সহায়তার আওতায় রয়েছেন ১১ হাজার ২৬৫ জন জেলে।

জানা গেছে, মেঘনাপাড়ের দরিদ্র মানুষের একমাত্র পেশা নদীতে মাছ শিকার করা। মাছ ধরতে পারলে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দু’বেলা খেতে পারেন। মাছ ধরা না গেলে চুলায় হাড়ি বসে না। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবেন। মাছ ধরা থেকে বিরত থেকেও নিবন্ধিত জেলেরা খাদ্য সহায়তার চাল বঞ্চিত হচ্ছেন।

বঞ্চিত জেলেরা বলছেন, আমরা নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারবো না। সরকারি সাহায্যও পাব না; তবে আমরা খাবো কি? বাঁচবো কিভাবে? 

জেলেদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে তারা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

কমলনগর উপজেলার পাটারিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু বলেন, ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬২৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৬২ জন জেলের জন্য চাল বরাদ্দ হয়েছে। অন্যরা চাল থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বরাদ্দ সীমিত, এ বিষয়টি জেলেদের বোঝানো অসম্ভব। এতে জনপ্রতিনিধিরা বির্তকিত হন ও সমালোচনার মধ্যে পড়েন। আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।  

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সব জলেকে নিবন্ধন তালিকায় আনার জন্য দাবি জানান তিনি।

উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নে ৭০৮ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ৩২৩ জন চাল পেলেও অন্যরা বঞ্চিত। এতে বঞ্চিত জেলেদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে জেলারা রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলার জেলারা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
গত বছর বিভিন্ন ইউনিয়নে বঞ্চিত জেলেরা চালের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন। যে কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তাই নিবন্ধিত সব জেলেকে ভিজিএফ সহায়তার আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম মহিব উল্লাহ বলেন, ৪৯ হাজার ৫৫৮ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৯৪৭ জন এ সুবিধা পাচ্ছেন। তারা ফেব্রুয়ারি থেকে চার মাস ৪০ কেজি করে চাল পাবেন। নিবন্ধিত জেলে যাতে খাদ্য সহায়তা পায় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জরি করে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এসআর/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।