বুধবার (৬ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ঢাকা) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ডিএনএ’র মাধ্যমে ১১টির মরদেহ শনাক্ত হয়েছে।
১১ মরদেহ শনাক্ত হওয়ার তিনজনের মধ্যে একজন হলেন- শাহীন আহমেদ (৪৫)। তিনি পরিবার নিয়ে চুড়িহাট্টা এলাকায় থাকতেন। তার স্ত্রী ময়না আক্তার বাংলানিউজকে জানান, তার স্বামী মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে তিনি আগুনে পুড়ে মারা যান। ছেলে ও মেয়ে ডিএনএ’র স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষার পর তার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে আগুনে নিহত রিকশাচালক নুরুজ্জামান (৪২) পরিবার নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়ায়।
তার স্ত্রী শিরিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার দিন রিকশা নিয়ে চুড়িহাট্টায় জ্যামে পড়েছিলেন তার স্বামী। সেখানে লাগা আগুনে পুড়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। পরে তার ছেলের ডিএনএ’র স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষার পর তার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত হয়। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি (২১) ডিএনএ’র মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করেন তার পরিবার। নিহত বৃষ্টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
তার মা শামসুন্নাহার বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার সময় একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি শেষ করে রিকশাযোগে তার বান্ধবীকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে ওই সে আগুনে পুড়ে মারা যায়।
তিনি আরও জানান, বৃষ্টির বাবার নাম জসিম উদ্দিন তারা লালবাগ পোস্তা ফাড়ির গলি এলাকায় থাকে। চকবাজারের ঘটনার ঠিক আধাঘণ্টা আগে তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে তার কথা হয়। তখন বৃষ্টি জানিয়েছিলো তার আধাঘন্টা সময় লাগবে বাসায় আসতে। তুমি চিন্তা করো না তারপরে থেকে তার যোগাযোগ বন্ধ অবশেষে ছোট ভাই, মায়ের ডিএনএ’র স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষার পর শনাক্ত করা হয় বৃষ্টির মরদেহ। এর আগে বুধবার সকালে নিহতদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ১১ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ৬৭টি মরদেহ থেকে ২৫৬টি (রক্ত, টিস্যু, হাড় ও বাক্কাল সোয়াব) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি বিচ্ছিন্ন পৃথক হাতকে পৃথক আলামত হিসেবে গণ্য করে সেটি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে মোট সংগৃহীত নমুনার পরিমান দাঁড়ায় ২৫৭টি।
শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে ঢামেক হাসপাতালে স্থাপিত অস্থায়ী বুথের মাধ্যমে মরদেহের দাবিদারদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়।
সর্বশেষ রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩৮ স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অশনাক্তদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সিআইডির ফরেনসিক টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে।
চলতি বছরের বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন পুড়ে মারা যায়। পরে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৭১ জনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৯
এজেডএস/এএটি