ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আলেমের পরিচয় কী? কাকে ‘আলেম’ বলা যাবে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৯
আলেমের পরিচয় কী? কাকে ‘আলেম’ বলা যাবে? ছবি: সংগৃহীত

আলেম শব্দের অর্থ জ্ঞানী। শরিয়তের পরিভাষায় আলেম বলা হয়, যিনি দ্বীন ও শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখেন ও সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমল করেন। পাশাপাশি সুন্নতের অনুসরণে নিজের জীবনকে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকেন।

দ্বীনি ইলম শিক্ষার জন্য জরুরি একটি শর্ত হচ্ছে, সনদ থাকা। অর্থাৎ কোনো আলেমের কাছ থেকে ইলম শিক্ষা করা।

বইপুস্তক দ্বীন শিক্ষার মাধ্যম হলেও মূলত দ্বীনি ইলম পাওয়া যায় উস্তাদের কাছ থেকেই। এভাবে ইলম শিক্ষা করা সরাসরি রাসুল (সা.) এর কাছ থেকে শিক্ষা করার মতোই। কারণ এই সনদ রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছে।

সুতরাং যে কোনো জ্ঞানীকে আলেম বলা যাবে না। আবার কেউ যদি নিজে নিজে ব্যাপক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন, তবুও তাকে আলেম বলা যাবে না।

দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য সনদ শর্ত
বিখ্যাত তাবেয়ি মুহাম্মাদ বিন সিরিন (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয় এই ইলম হলো দ্বীন। সুতরাং তোমরা ভালো করে যাচাই করে নাও কার কাছ থেকে তোমরা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছো!’ (মুসলিম: ২৬)

প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন, ‘সনদ হলো দ্বীনের অংশ। সনদ না থাকলে যার যা ইচ্ছা বলত!’ (মুসলিম: ৩২)

এ কারণেই প্রতিটি হাদিসের মান অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হয়। প্রত্যেক রাবি (বর্ণনাকারী) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। হাদিসশাস্ত্র তৈরি হয়েছে শুধু এই উদ্দেশ্যেই।

তাই সনদ ছাড়া কোনো হাদিস কিংবা দ্বীনি কোনো বিষয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বীনের প্রতিটি বিষয় গ্রহণ করতে হবে পূর্ণাঙ্গ সতর্কতার সঙ্গে। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে।

আমাদের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে আলেম বলতে তাকেই বোঝানো হয়, যিনি কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কারণ মাদরাসায় না পড়ে (সব শর্ত মেনে) প্রকৃত আলেম হওয়ার নজির নেই। মাদরাসার পাঠ্যসূচী, নিয়মতান্ত্রিকতা ও পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে একজন মানুষ মাদরাসায় পড়াশোনা করে প্রকৃত আলেমে দ্বীন হওয়ার পাশাপাশি আমলদার, আল্লাহপ্রেমী ও খোদাভীরু হতে পারে।

সুতরাং কেউ যদি মাদরাসায় পড়াশোনা করেও প্রকৃত আলেমে দ্বীন হতে না পারে, তাহলে এটা তার দুর্ভাগ্য ও ব্যর্থতা।

আলেম হওয়ার জন্য সার্টিফিকেট বিবেচ্য নয়। কেউ মাদরাসায় পড়াশোনা করলেই তাকে আলেম বলে দেওয়া যাবে না; যতক্ষণ না তার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, তিনি যথার্থই আলেম হতে পেরেছেন।

বর্তমানে অতি ফেতনার যুগে কওমি মাদরাসা যে দ্বীনের সবচেয়ে বড় দুর্গ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মাদরাসা থেকেই সত্যিকার আলেমেদ্বীন তৈরি হন। সমাজের সর্বস্তরে যেভাবে অধঃপতন শুরু হয়েছে, তাতে সঠিকভাবে দ্বীন পালন করতে হলে মাদরাসা ও আলেমদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা খুবই জরুরি। না হয় যেকোনো সময় বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অতি মাত্রায়।

ব্যতিক্রম সবক্ষেত্রেই আছে। মাদরাসায় পড়েও দুই-একজন ভিন্ন পথে চলে যাওয়া অসম্ভব নয়। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ মানুষ বাংলা-ইংরেজিতে কিছু ধর্মীয় বই পড়েই নিজেকে ‘বিশাল’ আলেম ভাবতে থাকেন। এমন লোকদের কিছু বোঝালেও বুঝতে চান না। সঠিকভাবে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন না করার কারণে, এদের অনেকের মধ্যে মারাত্মক বিভ্রান্তি থাকে। আল্লাহ রক্ষা করুন।

এদের ধর্মীয় পড়াশোনা ও ইসলামের প্রতি ভালোবাসা সাধুবাদ যোগ্য। কিন্তু ধর্মীয় পড়াশোনা ও মৌলিক জ্ঞান অর্জন হোক সুস্থ ও সঠিক পদ্ধতিতে। না হয় ভুল বোঝার কিংবা ভুল ব্যাখ্যা করার আশঙ্কা থেকেই যায়।

প্রসঙ্গত দ্বীনি বিষয়ে ব্যক্তিগত পড়াশোনা করেও বিভ্রান্ত হননি, এমন মানুষও আছেন অনেক। এর কারণ হলো, তারা কোনো আলেম বা আল্লাহওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন অথবা তাবলীগের মেহনতের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।  এ ধরনের মানুষের  আমলও যদি সঠিক হয়, তাহলে আমরা তাকে ‘আবেদ’ বা ইবাদতগুজার বলতে পারি। তিনি একজন মুমিন বান্দা, ইবাদতমগ্ন ব্যক্তি ও ভালো মানুষ। তবে তিনি কিন্তু আলেম নন। কারণ আলেম হওয়ার পথ-পরিক্রমা তিনি অতিক্রম করেননি।

যারা আলেম হয়েছেন এবং যারা হতে ইচ্ছুক—আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে আমল-আখালাকে জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন।

রাইহান খাইরুল্লাহ: আলেম, লেখক ও গবেষক

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।