কিন্তু পঞ্চগড়ের মুক্তিযোদ্ধা মুক্তুমিয়া বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই তাকে ভিক্ষুক মুক্তুমিয়া বলেই চেনেন।
মুক্তুমিয়ার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় মহারাজাদিঘির পাড়ে। ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় এলাকার দুর্গম পথে মুক্তিযোদ্ধাদের গাইড করেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। একই সঙ্গে এঁকে দিয়েছেন স্কেচ ম্যাপ, কখনো বা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তৎকালীন পঞ্চগড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব আলম তার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিগ্রন্থ ‘গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধ’ নামক বইয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার নাম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু একাত্তরের পর ভুলক্রমে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর্যন্ত তাকে ভাগ্য বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরতে হয়েছে দ্বারে দ্বারে। থেমে নেই এখনও, সেভাবেই ভিক্ষার থলি হাতে কাটছে তার জীবন। দুর্ভাগ্য এখনো পিছু ছাড়েনি তার।
স্বাধীনতার পর ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় মুক্তুমিয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো তিনি কোনো ভাতা পাননি। তাই অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে তার।
একসময়কার সাহসি মুক্তিযোদ্ধা মুক্তুমিয়া ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন বয়সের ভার এবং অসুস্থতার কারণে ভিক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
৭/৮ বছর আগে মুক্তুমিয়াকে নিয়ে দেশের শীর্ষ নিউজপোর্টাল বাংলানিউজসহ একাধিক টিভি ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও তিনি এখনো পর্যন্ত পাননি কোনো সাহায্য। বাংলাদেশে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রকাশিত বইয়ে লেখা রয়েছে মুক্তুমিয়ার নাম। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারপরও মিলছে না কোনো ভাতা।
পরিবারের অভাব অনটনের কারণে ছেলে মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। পরে বেঁচে থাকার জন্য তিনি বেছে নেন এই ভিক্ষার পেশা। মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে আসেন তার ছোট মেয়ে। বর্তমানে সেই কোনমতে মুক্তুমিয়ার দেকভাল করছেন বলে জানা যায়।
কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা মুক্তুমিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই বাছাইয়ে মনোনীত হলেও এখনো পাচ্ছেন না কোনো সাহায্য বা ভাতা। এত বছর ভিক্ষা করে কোনোমতে চললেও বর্তমানে অসুস্থ ও টাকার অভাবে মানবেতর জীবন জাপন করছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, বর্তমান অনুদান হিসেবে মিলেছে ‘জমি আছে, ঘড় নাই’ প্রকল্পের একটি ঘর। কিন্তু পেটের ক্ষুধা মেটাতে ভিক্ষা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এরই মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় মুক্তুমিয়ার একমাত্র সঙ্গী চশমাটাও হারিয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় পথ চলা, তাও ক্ষুধা মেটাতে থেমে থাকেননি তিনি, অন্ধের মত হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা করতেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মুক্তুমিয়ার শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ। কিন্তু টাকার অভাবে গত কয়েক মাস ধরে আটকে রয়েছে চিকিৎসা। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহব্বান জানান এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াছমিনের সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ব্যস্ততার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৯
আরএ