ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইনে বিজ্ঞাপন ফাঁদ: লন্ডনে রেস্তোরাঁ, ঢাকায় ফ্ল্যাট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৯
অনলাইনে বিজ্ঞাপন ফাঁদ: লন্ডনে রেস্তোরাঁ, ঢাকায় ফ্ল্যাট গ্রেফতার চারজন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা শাহীন হায়দার। যিনি বিডি জবসে বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে হাজার খানেক বেকার যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর ওই জালিয়াতির টাকায় লন্ডনে একটি রেস্টুরেন্ট ও রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি।

অনলাইনভিত্তিক দেশের শীর্ষ চাকরির সন্ধানদাতা প্রতিষ্ঠান বিডি জবসে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার দায়ে মূল হোতা শাহীন হায়দারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।

গ্রেফতার বাকিরা হলেন- তাজুল, হাসান ও শ্যামল।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিম জব্দ করা হয়।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যদের সঙ্গে বিডি জবসের কয়েকজন কর্মী সরাসরিভাবে জড়িত। প্রতারক চক্র যখন তাদের বিজ্ঞাপন আপলোড করতে বলতো, তখন তারা বিজ্ঞাপন আপলোড করে দিতেন। আবার বিজ্ঞাপন ডাউন করতে বললে তা-ও করতেন। মাঝে মাঝে প্রতারক চক্রটির কাছে বিজ্ঞাপন আপলোডের নামে অধিক টাকাও দাবি করতেন বিডি জবসের কর্মীরা।

যেকোনো চাকরির বিজ্ঞাপন আপলোড করার আগে ওই প্রতিষ্ঠানের সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বিজ্ঞাপন ছাপানোর নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে বিডি জবস, তা করেনি।

প্রতারণার কৌশলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে লোক পাঠানোর নামে চক্রটি কাতারভিত্তিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে বাংলাদেশ থেকে লোভনীয় বেতনে স্বপরিবারে কাতার নিয়ে যেতে বিডি জবসে বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনের লিংকের মাধ্যমে আবেদন করলে আগ্রহী প্রার্থীকে ই-মেইল অ্যাড্রেস দিতে বলা হতো। প্রতারক চক্রটি পাঁচ থেকে সাতদিন পর ওই পদে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচিত হয়েছেন এমন একটি লেটার প্রার্থীর ই-মেইলে পাঠাতো। তারা জানিয়ে দিতো কাতারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। একইসঙ্গে মেইলে ওই প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর সরবরাহ করা হতো।

পরে আগ্রহী ব্যক্তি ওই প্রতিনিধিকে ফোন দিলে, তিনি বিভিন্ন ভাষায় কখনও ইংরেজি কখনও আরবিতে কথা বলতেন এবং প্রার্থীদের ব্যস্ততা দেখিয়ে পদ খালি নেই বলে ফোন কেটে দিতেন।

এর দু’একদিন পর আবেদনকারী আবার ফোন করলে কিংবা না করলে তিনি নিজে ফোন দিয়ে আবেদনকারীর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট স্ক্যানকপি চাইতেন এবং একটা বিকাশ নম্বর দিয়ে কাতার দূতাবাসের সত্যায়ন ফি বাবদ সাড়ে সাত থকে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলতেন। এরপর প্রার্থীর ই-মেইলে অফার লেটার, কনফারমেশন লেটার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাঠানো হতো। এসবের মধ্যে কাতারে দুই সপ্তাহের হোটেল বুকিং, পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং এবং এয়ার টিকিটি বাবদ প্রার্থীর কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে নিতো। এরপর প্রার্থী টিকিট কবে পাবে- এসব বিষয়ে ফোন দিলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যেতো। সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার, ছবি: বাংলানিউজডিসি বিপ্লব কুমার বলেন, আমরা বিডি জবস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, তাদের প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুধু তা-ই নয়, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অন্যের বায়োমেট্রিক সিম অবৈধভাবে বিক্রি করেন। এসব সিম দিয়েই প্রতারক চক্র জালিয়াতি করে। আমরা মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কারও কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূল হোতা শাহীন হায়দারের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। চক্রটিকে মোবাইলের বায়োমেট্রিক সিম সরবরাহ করতেন হাসান ও তাজুল। তারা অন্যের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ও সিম প্রতারক চক্রের কাছে ১৫ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।

শ্যামল ভুয়া অফার লেটার, কনফারমেশন লেটার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বানাতেন। প্রতারক চক্রটি ব্যবহৃত সিম দিয়ে শুধুমাত্র ভুক্তভোগীদের ফোন দিতো।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা হয়েছে। বুধবার আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৯
পিএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।