জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকেই বুলডোজার দিয়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। সে লক্ষ্যে এসব এলাকায় বুধবারই বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, অর্ধশত উচ্ছেদের নোটিশ আমলে না নিলেও বুধবার (২৭ মার্চ) তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডেও উচ্ছেদ তৎপরতা দেখে হালে পানি পায়নি অবৈধ দখলদাররা। তারা আঁচ করেছেন, ৩০ বছর ধরে নদের পাড় থেকে গর্ভ দখলে রাখলেও এবার অবসান ঘটতে চলেছে, আর রেহাই নেই। পরে রাতেই তোড়জোড় করে যতোটুক রক্ষা করা যায়, সে অনুযায়ী মালামাল এবং তৈজসপত্র বের করতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্ত্বরের নদের জমি দখল করে থাকা হাসান বুক ডিপো, হেলাল বুক ডিপো, হাসান অ্যান্ড কোং, বুক প্যালেস, হাবিব বোডিংসহ গরিব শাহ মাজার পর্যন্ত প্রত্যেকটি দোকান, ব্রিজের ওপারের ফলের দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন মালিকরা। কোনো কোনো দোকান মালিক তৈজসপত্র, জানালা, দরজা, গ্রিল খুলে পিকআপ-ট্রাকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
যশোর জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদের জায়গা দখল করে এবং জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের জায়গায় গড়ে তোলা ২৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে একাধিকবার নোটিশ করলেও কর্ণপাত করেনি দখলদাররা। এতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত য়া ভৈরব নদের খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছিলো। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদেও চূড়ান্ত নোটিশকেও আমলে নেয়নি অবৈধ দখলদাররা। ফলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ভৈরব খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার চৌগাছার তাহেরপুর থেকে ভৈরব নদের উৎপত্তি হয়ে শহরের ভিতর দিয়ে অভয়নগর-নওয়াপাড়া হয়ে খুলনার রূপসা নদীতে মিশেছে। এরমধ্যে খুলনা থেকে নওয়াপাড়ার আফরা ঘাট পর্যন্ত এখনো পুরোপুরি জোয়ার-ভাটা থাকায় কার্গো, লাইটার জাহাজসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করছে। তবে নওয়াপাড়ার আফরা ঘাট থেকে চৌগাছার তাহেরপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯৬ কিলোমিটার কয়েকযুগ ধরে নদটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও অবৈধ দখলের কারণে নদের অস্তিত্ব পাওয়াটাও কঠিন।
ফলে যশোরবাসীর দাবি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। কয়েকমাস আগেই এই ৯৬ কিলোমিটার নৌপথ খননে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। এরইমধ্যে পুরোদমে খনন কাজ চলছে। যশোর সদর উপজেলার দায়তলা, ফতেপুর, কচুয়া, রূপদিয়া ও রাজারহাট এলাকায় খনন শেষ হয়েছে। তবে যশোর শহরের দড়াটানা থেকে বাবলাতলা ব্রিজ পর্যন্ত ২৯৬টি অবৈধ স্থাপনার কারণে খনন কাজে সংশয় সৃষ্টি করেছিলো, তবে শেষমেষ জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খনন প্রকল্প শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক ব্যাপক উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন, কৃষিতে সেচ, নৌপথে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন, মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আলাদা আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে ভৈরব নদেও দু’পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, শহর এলাকায় নদীর প্রস্থ ৩২ মিটার খনন করা হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ভৈরব খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই, ফলে দখলদারদের কয়েক দফায় নোটিশ করেও সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নদী কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি নদ-নদীর দখলদারদেও উচ্ছেদ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৯
ইউজি/জেডএস