নিহতরা হলেন- জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের মুন্সিবাড়ীর মকবুল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল, মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাও ইউনিয়নের নাগদা গ্রামের বেনু প্রাধানিয়ার ছেলে রেজাউল করিম রাজু, কচুয়া উপজেলার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের বাইছাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান চঞ্চল।
তমাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন।
মিনহাজ বাংলানিউজকে জানান, তমাল ঢাবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি ইইউ আর বিডি সলিউশন-এ সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তমালের চাচাতে ভাই ফরিদগঞ্জের শ্রিকালিয়া গ্রামের সালাহউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, তমালরা স্ব-পরিবারে ঢাকার সারুলিয়ায় থাকতেন। তার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তমাল দ্বিতীয়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা গ্রামের রেজাউল করিম রাজু ওই ভবনের পঞ্চম তলার আসিফ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ওই ভবনের পঞ্চম তলার পুরো প্লটটি তিনি কিনে ব্যবসা করতেন। রাজু এক ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। রাজু স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বনানীতে থাকেন। বাবা বেনু প্রধানীয়া চট্রগ্রামের একজন ব্যবসায়ী।
রাজুর চাচা শ্বশুরের ছেলে ট্রাভেলস ব্যবসায়ী হাজী জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আমরা তার মরদেহ শনাক্ত করে গ্রহণ করেছি। তাকে কোথায় দাফন করা হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছিনা। রাজু জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ওড়পুর গ্রামে বিবাহ করে।
রামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মানিক বাংলানিউজকে জানান, রাজু একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তারা কেউই এলাকাতে থাকতেন না। রাজুর বাবা চট্টগ্রামের একজন বড় ব্যবসায়ী।
অপরদিকে, নিহত আতাউর রহমান চঞ্চলের চাচাতো ভাই দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান মুন্সী নূরুল আলম বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, চঞ্চল কয়েকদিন আগে বনানীতে অফিস স্থানান্তর করেন। ঘটনার সময় চঞ্চল শেষবারের মতো তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইফরানুর রহমানকে ফোন করে বলেন আমি ছাদে আছি। কিন্তু পরবর্তীতে তার ছেলেসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে ভবনের ছাদসহ কোথাও খুজেঁ না পেয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করে। রাত ৩টার দিকে সিএমএসএস হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ শনাক্ত করে শুক্রবার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে নিয়ে আসি।
চঞ্চলের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহুগুনগ্রাহী রেখে গেছেন। নিহতের মেয়ে তাসনিয়া রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।
বিতারা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবদুল বারেক প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, চঞ্চল বাংলাদেশ বিমানের সাবেক কর্মী ছিলেন। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একটি ট্রাভেলসে চাকরিতে যোগ দেন। আগুনে তার শরীর ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফ আর টাওয়ারের আট ও নয়তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ ২৫ জন নিহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে ২৪ জনের মরদেহ তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, এ অগ্নিকাণ্ডের যথাযথ কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) আট সদস্য বিশিষ্ট ‘অগ্নিকাণ্ডের যথাযথ কারণ অনুসন্ধান ও সুপারিশমালা প্রণয়ন’ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
এনটি