ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বনানীর আগুন: দম্পতি নিহতের ঘটনায় জলঢাকায় শোকের মাতম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
বনানীর আগুন: দম্পতি নিহতের ঘটনায় জলঢাকায় শোকের মাতম দম্পতি নিহতের ঘটনায় জলঢাকায় শোকের মাতম। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে দম্পতি নিহতের ঘটনায় নীলফামারীর জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নে মেয়ের বাড়ি বিন্যাকুড়ি গ্রামে চলছে শোকের মাতম।

নিহত দম্পতিরা হলেন- বিন্যাকুড়ি গ্রামে আশরাফ আলীর মেয়ে (সাত মাসের অন্তঃসত্তা) রুমকি বেগম (২৮) ও পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মাকসুদুর রহমান (৩১)। এরা দুইজনই ওই টাওয়ারে ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন।

নিহত রুমকি তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। দুর্ভাগ্যক্রমে পাঁচ মাস আগে রুমকির মাও মারা যান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে বিন্যাকুড়ি গ্রামে নিহতের পরিবারের কান্না ও আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।  

নিহত রুমকির খালু শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে রুমকির বিয়ে হয়। গত চারদিন আগে মেয়ে ও জামাই গ্রামে বেড়াতে আসেন। আর তার চারদিন পর তার মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।

মেজো ভাই ও বিন্যাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আলী রনি বলেন, গত ১৭ মার্চ (রোববার) মোবাইলফোনে কথা হয় রুমকির সঙ্গে। সে জানিয়েছিল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জামাই নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। এই কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে আর কিছুই বলতে পারেনি।

বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রকি (৩৫) বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। বাবা আশরাফ আলী বুকের ধন মেয়ে ও জামাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কিছুদিন আগে স্ত্রী হারানোর বেদনা ভুলতে পারিনি। এর পর মা হারা মেয়েটিও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি এতিম হয়ে গেলাম।  

চাচাতো বোন জয়া বেগম (৪২) বলেন, রুমকির শিক্ষা জীবন ও বিবাহিত জীবন ঢাকায়। সে মাস্টার্স পাশ করে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ওই এফ আর টাওয়ারে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে চাকরি করতেন। রুমকি ১০ তলায় আর ভগ্নিপতি মাকসুদুর (বোনের জামাই) ১১ তলায় কর্মরত ছিলেন। শুনেছি জীবন বাঁচাতে ১১তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে মাকসুদুরের মৃত্যু হয়। আর রুমকি কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।  

রুমকির চাচা ও জলঢাকা উপজেলা পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী বলেন, আমার ভাই আশরাফ তার একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায়। তিনি ঢাকায় গিয়ে তার মেয়ের মরদেহ বুঝে নেন এবং জামাই মাকসুদুরের বাড়ি ঢাকায় হওয়ায় তার মরদেহটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুজাউদৌলা বাংলানিউজকে বলেন, রুমকির নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মায়ের পাশে (চিরনিদ্রায়) দাফন করা হয়েছে।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নীলফামারী-৩ আসনের মেজর রানা (অবঃ) মোহাম্মদ সোহেল।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

** স্ত্রী মরলেন ভবনের ভেতরে, লাফিয়ে পড়ে স্বামী

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।