ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বেঁচে যাওয়া ‘স্বপ্নের’ বিকিকিনি ফুটপাতে

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
বেঁচে যাওয়া ‘স্বপ্নের’ বিকিকিনি ফুটপাতে আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া মালামাল নিয়ে ফের বিক্রির জন্য ফুটপাতে বসেছেন এ বিক্রেতা

ঢাকা: গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচা বাজারের প্রায় পুরোটাই পুড়ে ছাই। দুই বছর আগেও এভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিলেন এখানকার প্রত্যেকটি ব্যবসায়ী। এরপর আবারো ধ্বংসস্তূপে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন তারা।

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। আসন্ন রোজাকে টার্গেট করে বেশিরভাগ দোকানদার মালামাল মজুদ করছিলেন।

মুহূর্তেই আগুনে আবারো চোখের সামনে সবকিছু ছাই হয়ে যেতে দেখলেন তারা। এ যেন একেকজন দোকানদারের আকাশসম স্বপ্নের শুরুতেই অপমৃত্যু।

শনিবার (৩০ মার্চ) ভোরের আলো ফোটার আগেই মার্কেটে আগুন লাগে। এ সময়টাতে বেশিরভাগ দোকানিই ছিলেন নিজ বাসায়। তবে কাঁচামালের দোকানিদের অনেকেই সেই সময়টাতে উপস্থিত থাকায় তড়িঘড়ি করে রক্ষা করতে পেরেছেন কিছুটা।

আর সেসব পণ্য নিয়ে বসে পড়েছেন ডিএনসিসি মার্কেটের পাশের ফুটপাতগুলোতে। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হলেও বেঁচে যাওয়া ‘স্বপ্নের’ বিকিকিনিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে তাদেরকে।

মার্কেটের পেছনের ফুটপাতে কাঁচামাল সাজিয়ে বসেছেন শরীফ। তিনি জানান, ভোরে শাক-সবজি এনে দোকানে গোছাচ্ছিলেন, এর মধ্যেই আগুন লাগে বাজারের আরেক পাশে। তখন তাড়াহুড়া করে কিছু মালামাল বস্তায় ভরে বের করতে পেরেছেন তিনি।

তিনি বলেন, যারা কাঁচামালা বিক্রেতা তারা কিছু মালামাল বের করতে পেরেছে। তবে অন্যরা কিছুই বের করতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বাজারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

বাজারের আরেক কাঁচামাল বিক্রেতা সুজন বলেন, যাদের কাঁচামালের দোকান তারা সাধারণত সে সময় (আগুন লাগার সময়) মালামাল নিয়ে আসে, তাই তাদের অনেকে ছিলো। কিন্তু মুদি দোকানসহ অন্যান্য দোকানিরা সাধারণত ১০টার আগে মার্কেটে আসেন না। তাদেরকে খবর দিলেও আসতে আসতে বেশিরভাগই দোকানিই আর দোকানে ঢুকতে পারেননি।

আর আর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কসমেটিকসের দোকান ভাড়ায় চালাতেন রেজাউল ইসলাম। ২০১৭ সালে যখন আগুন লাগে ৭৫ লাখ টাকার জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল তার, এবার গেলো ৩০ লাখ টাকার মালামাল।

নিজের কপালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রেজাউল ইসলাম বলছিলেন, এখন আমার কি হবে, আমার তো সব শেষ।

রেজাউল বাংলানিউজকে বলেন, দোকানের মালিক শাহজাহান মল্লিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা অগ্রিমে দোকান ভাড়া নিয়েছিলাম, প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিতাম। আমার এখন পথে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো গতি নেই।

পুরো কাঁচাবাজারের কোনো দোকানই অবশিষ্ট নেই জানিয়ে কনফেকশনারি দোকানের মালিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাজারের ২৯২টি দোকানের মধ্যে ৮১টি দোকান কিছুদিন আগে ডিএনসিসি মার্কেটের পার্কিংয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বাকি ২১১টি দোকানের সবগুলোই এবার পুড়ে গেছে।

নজরুল ইসলাম জানান, ভোরে তিনি আগুন লাগার খবর পান। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখেন পুরো মার্কেটেই আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে।

কাঁচাবাজারের মাংসের ব্যবসায়ী গফুর হোসেন বলেন, সব শেষ হয়ে গেছে ভাই, পাঁচটি দোকান ছিল সব শেষ।

শনিবার ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দুই প্লাটুন সদস্যসহ বিমান এবং নৌবাহিনীরর সদস্যদের সমন্বিত চেষ্টায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, মার্কেটে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পানির সঙ্কট ছিল। ২০১৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা মার্কেট কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে অনুসরণ করেনি।

এদিকে, আগুন নেভার পর যার যার দোকানে ঢুকে অবশিষ্ট মালামাল বের করে আনছেন ব্যবসায়ীরা। মালামালের অধিকাংশই অর্ধপোড়া অবস্থা, সাধারণত সেসব কোনো কাজে আসবে না। তারপরেও অবশিষ্ট অর্ধপোড়া মালামাল নিয়ে অনেকেই বসে আছেন রাস্তার পাশে। যাদের চোখে-মুখে কিংবা কথায় আশঙ্কা ও আতঙ্কের ছাপ। আগুনে পুড়ে গেছে সব এটুকুই জানেন সবাই, জানেন না সামনে কি অপেক্ষা করছে তাদের?

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।