ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যাংক ঋণে সুদ কমাতে পদক্ষেপ নেবে সরকার 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
ব্যাংক ঋণে সুদ কমাতে পদক্ষেপ নেবে সরকার  বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: দেশের শিল্পায়নের বিকাশে ব্যাংক ঋণে সুদ কমাতে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্প মেলা (এনআইএফ) ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি।

ঋণে সুদের হার কমাতে ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা আবার বসবো।

কীভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শিল্পায়নে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ব্যাংক ঋণ।

ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমাতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি, আমি আবার উদ্যোগ নিলাম, সবার সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। যেমন আমাদের সরকারি ব্যাংকের অর্থ আগে ৭০ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে রাখা হতো, বাকি রাখা হতো বেসরকারি ব্যাংকে। ব্যাংকের মালিকরা বললো এটা যদি ৫০-৫০ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনবো। আমরা সেটা করে দিলাম।  

‘কিছু ব্যাংক ঠিকই সুদের হার ৯ শতাংশে নামালো কিন্তু সবাই তা করলো না। না করে বাড়তে বাড়তে প্রায় ১৪, ১৫, ১৬ তে নিয়ে গেলো। কেন করলো না তাদের এই সুযোগটা দেওয়া সত্ত্বেও। ’

শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমার এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে- এই ব্যাংকের মালিক যারা তাদেরও তো শিল্প কলকারখানা আছে, তারাও তো ব্যবসা বাণিজ্য করেন। তাহলে আমার তো সেই জায়গাটাতে হাত দিতেই হবে। তারা ব্যাংকও চালাচ্ছে, শিল্পও চালাচ্ছে। আবার তারা সুদের হার কমাবে না। তাহলে তাদের ব্যবসা কি কি আছে, না আছে, ট্যাক্সটা ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা, ভ্যাটটা দিচ্ছে কিনা, কাঁচামাল ঠিকমতো আছে কিনা, শুধু সরকার সব করে দেবে তা তো না।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ঠিকমতো পরিশোধ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ না করার প্রবণতাও দূর করতে হবে।

ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণ এক সময় সিঙ্গেল ডিজিটে ছিল। কিন্তু উঠতে উঠতে ডাবল ডিজিটে। সেটাও এতটা হতো কারণ অনেক সময় আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য কোথাও কোথাও থেকে আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ নিতে হয়। সুযোগ-সুবিধা নিতে হয়। তখন অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ব্যাংক সুদের ওপর যে ক্যাপ সিস্টেমটা ছিল, এটা আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশনে তুলে দিতে বাধ্য হয় ওখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার জন্য। তারপরই ব্যাংকের ঋণটা লাগামছাড়া হয়ে যায়।

বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর বেসরকারি খাতকে সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা চাই বেশি বেশি বিনিয়োগ হোক, বেশি বেশি কর্মসংস্থান হোক। আমার দেশের মানুষ কাজ পাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই না যে যেখানে শিল্প গড়ে ওঠে আমাদের কৃষিজমি নষ্ট হোক

নতুন নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের দেশের বাজারের পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাজার রয়ে গেছে। এই প্রতিবেশী দেশের বাজারগুলো আমাদের খুঁজে বের করে কোন দেশে কোন ধরনের পণ্য রপ্তানি করতে পারি সেটাও আমরা দেখতে পারি।

বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে তা বিদেশের বাজার রপ্তানি করার উদ্যোগ নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প কলকারখানাগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, নদী নষ্ট হচ্ছে। এটার দিকে কেউ নজরই দিতে চায় না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সামান্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু এখানে কার্পণ্য কেন। দেশটাকে তো রক্ষা করতে হবে, দেশের পরিবেশটা তো রক্ষা করতে হবে।

দেশের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে ব্যবসায়ীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শিল্প সচিব আবদুল হালিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।