ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন সিটির ভোট

মসিকের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উদ্দীপনা

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
মসিকের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উদ্দীপনা মসিক

দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ১২তম সিটি করপোরেশন হয়েছে ময়মনসিংহ। গেজেট প্রকাশ ও প্রশাসক নিয়োগের পর অধীর অপেক্ষা ছিলো নতুন সিটিতে প্রথম ভোটের। এই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছে আগামী ৫ মে। 

এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রথম ভোট হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেই মনে করছেন নগরবাসী।

 

নতুন মহানগরে নতুন মেয়র। এই বিষয়কে সামনে রেখে চলছে জল্পনা। ভোট কেমন হবে, কেমন মেয়র চাই, তরুণ ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশা, সিটি করপোরেশন ভিশন-২০৩১ নিয়ে ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব।  

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচন হবে আগামী ৫ মে। নবগঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন এটি। নির্বাচনকে ঘিরে ময়মনসিংহে চলছে জোর প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূলে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোড় চলছে।  

আর এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন ভোটাররা। নিজেদের ভোটের মাধ্যমেই পছন্দের নগর পিতা নির্বাচন করতে অপেক্ষায় আছেন তারা। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এই ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ফলে জমজমাট ভোটযুদ্ধের প্রত্যাশা করছেন নগরের বাসিন্দারা।  

শহরের সচেতন বাসিন্দারা মনে করছেন, এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উপরই নির্ভর করছে ময়মনসিংহ সিটির রাজনীতির ভবিষ্যত। সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশ ও প্রশাসক নিয়োগের পর থেকেই মূলত সিটির প্রথম ভোটের অপেক্ষার পালা শুরু হয়। পুরোদমে লেগে যায় নির্বাচনী হাওয়া।  

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার, প্যানাফ্ল্যাক্সে ছেঁয়ে গেছে প্রাচীন শহর ময়মনসিংহ। এছাড়া নিজস্ব উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা-সব খানেই চলছে এখন এই নির্বাচনী গপ্পো।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক ও পৌরসভার শেষ মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু হাইকমান্ডের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন।  

সব সময় সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে সক্রিয় টিটুর প্রতি নগরীর বাসিন্দাদেরও সমর্থন রয়েছে। ফলে তাকেই জনসমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগও। গত সাড়ে ৯ বছরে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে শহরের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।  

সঙ্কট ও সমস্যার বেড়াজাল থেকে ময়মনসিংহকে বের করে আনতে নানামুখী সংস্কার প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় নান্দনিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে ‘সুন্দর ময়মনসিংহে’র ভিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন প্রশাসক টিটু।
 
তার পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর নামও রয়েছে মেয়র পদে প্রার্থীর আলোচনায়। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এহতেশামুল আলম। তবে শান্ত এখনও এই বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি।  

মনোনয়নের বিষয়ে এহতেশামুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহ গড়তে চাই। এজন্য দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই নির্বাচন করবো।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের নেতারা জানান, বিএনপি যেহেতু আসছে না। তাই ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারলে প্রথম এই নির্বাচন অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ভোটযুদ্ধ প্রাণ পাবে বলেও আশাবাদী তারা।  

হাইভোল্টেজের এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে তিন নেতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন- ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আহমেদ, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মূসা সরকার এবং জেলা যুবসংহতির সাবেক সভাপতি স্বপন মন্ডল।  

তারা নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ শেষ পর্যন্ত কাকে প্রার্থী হিসেবে বাছাই করেন তার ওপরই নির্ভর করছে ভোটের মেজাজ।  

এ ক্ষেত্রে সবসময়ই দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা জাহাঙ্গীর আহমেদকেই তৃণমূলের পছন্দ বলে জানিয়েছেন পার্টির নেতারা।  

জানা যায়, গত বছরের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। গত ২৫ মার্চ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ৮ এপ্রিল ও ভোট গ্রহণের তারিখ ৫ মে।  

মূলত তফসিল ঘোষণার পরই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। যদিও সিটির গেজেট প্রকাশের পর থেকেই মসিকের ৩৩ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়।  

অবশ্য বাস্তবতা হলো আরও আগে থেকেই ময়মনসিংহ মহানগর নির্বাচন নিয়ে ব্রহ্মপুত্রপাড়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।  

ময়মনসিংহের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সমস্যা এবং সঙ্কটমুক্ত নতুন সিটি ময়মনসিংহ চাই। যিনি সার্বক্ষণিক জনগণের সঙ্গে থাকবেন, আমাদের খোঁজ খবর রাখেন-রাখবেন এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে নগরীকে এগিয়ে নিতে পারবেন তিনিই হবেন আমাদের আরাধ্য নগর পিতা। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র হিসেবে হঠাৎ হঠাৎ জনসম্মুখে আবির্ভাব হওয়া কাউকে চাই না। পাশাপাশি মেয়র যিনি হবেন তার মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করার গুণাবলী ও মানসিকতা থাকতে হবে।  

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি মহানগরের গোড়াপত্তনে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিই আমাদের আস্থা থাকবে,’ বলেন তিনি।  

নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, একটি নগরীতে অনেক সমস্যা থাকে। সবার মতামত নিয়ে নাগরিকদের সহযোগিতা নিয়ে যিনি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করতে পারবেন, শুধু দলীয় সাইনবোর্ড নয়, যিনি সবার মেয়র হিসেবেই প্রকৃত সেবা সিটির বাসিন্দাদের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবেন এমন মেয়রই চাই আমরা।  

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হবেন ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে হবে তাকে।  

‘সরকারের সূচিত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নগরীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন অলরাউন্ডার নগর পিতা চাই আমরা,’ যোগ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
এমএএএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।