ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন সিটিতে ভোট

আধুনিক ময়মনসিংহ মহানগরের ভিশন-২০৩১

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৯
আধুনিক ময়মনসিংহ মহানগরের ভিশন-২০৩১ মসিক ভবন

দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ১২তম সিটি করপোরেশন হয়েছে ময়মনসিংহ। গেজেট প্রকাশ ও প্রশাসক নিয়োগের পর অধীর অপেক্ষা ছিলো নতুন সিটিতে প্রথম ভোটের। এই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছে আগামী ৫ মে।

এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। বিএনপি না এলেও প্রথম ভোট হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে এই নির্বাচন।

নতুন মহানগরে নতুন মেয়র। এই বিষয়কে সামনে রেখে চলছে জল্পনা। ভোট কেমন হবে, কেমন মেয়র চাই, তরুণ ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশা, সিটি করপোরেশন ভিশন-২০৩১ নিয়ে তিনপর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন শেষ পর্ব।

ময়মনসিংহ: ইতিহাস-ঐতিহ্যময় ময়মনসিংহ শিল্প-সংস্কৃতির নগর। সুন্দর ও বসবাসযোগ্য ময়মনসিংহ গড়ে তুলতে ২০৩১ সাল মেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এই ভিশন বাস্তবায়ন হলে পরিচ্ছন্ন, আলোকিত ও সবুজ নগরের চেহারা পাবে ময়মনসিংহ।  

আধুনিক সেই ময়মনসিংহ হবে পুরোপুরি যানজট, জলজট ও ঘিঞ্জি অবপাদমুক্ত। উন্নত ও আধুনিক মহানগর গড়তে এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে অপেক্ষা করতে হবে আরো এক যুগ।  

বিভাগীয় সদরে উন্নীত হওয়া ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দামামাও ইতোমধ্যেই বেজে উঠেছে। ভোটের তারিখ নির্ধারণের পাশাপাশি আগামী দিনের উন্নয়নের রূপকারকে বেছে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে মহানগরবাসী।

গত ১০ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের উপকণ্ঠের এই শহরে বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়নযজ্ঞের সূত্রপাত হয়। এর আগে পাশের অন্য শহরগুলো যখন নেতৃত্বের দূরদর্শিতায় উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে ঠিক তখনো কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব না থাকায় বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে এখানকার উন্নয়ন।

এমন অবস্থায় তিলোত্তমা ময়মনসিংহ গড়ার ভিশন নিয়ে গত সাড়ে ৯ বছর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি।

ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশের নর্দমার উন্নয়নসহ ১২৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার সড়ক। ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষা জয়নুল উদ্যান ও বিপিন পার্ককে সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে বদলে দেওয়া হয়েছে। শহরের বাঘমারা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন একটি মিনি পার্ক নির্মিত হয়েছে। পরিচ্ছন্ন সবুজ নগর গড়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশের মডেল নগরের স্বীকৃতিও পেয়েছে ময়মনসিংহ।

পড়ুন>**মসিকের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উদ্দীপনা

জার্মানি আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ক্লাইমেটচেঞ্জ: ইফেক্টস অ্যান্ড এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিসিইবি)’ সম্মেলনেও ময়মনসিংহ নগরের আবর্জনামুক্ত ব্যবস্থাপনার সাফল্য প্রশংসিত হয়েছে।

শহরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে টাউন হল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ২০০ আধুনিক এলইডি বাতি লাগানোয় সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকারের চিত্র নেই শহরে। এতে করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন নগরবাসী।

ময়মনসিংহের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিভিন্ন ভাস্কর্যের মাধ্যমে নান্দনিকরূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শহরের মোড়ে মোড়ে শৈল্পিক স্থাপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নগরীর সৌন্দর্য। ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষে শহরের ব্রিজ মোড় থেকে থানা ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক ও বিনোদন কেন্দ্রের কাজও চলছে জোরেশোরেই।

ব্রহ্মপুত্র নদের প্রাকৃতি সৌন্দর্য বর্ষাকালেও যেন দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকবে এই বিনোদনকেন্দ্রে। একই সঙ্গে শিক্ষার এই শহরে সিটি করপোরেশনের আগে বিলুপ্ত পৌর পরিষদের উদ্যোগে দুটি সিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

আগামীতে একটি মহাবিদ্যালয় ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় করারও পরিকল্পনা রয়েছে সিটি প্রশাসক ইকরামুল হক টিটুর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর বিভাগীয় সদরের পৌরসভাকে মহানগরে উন্নীত করেন। বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের সাথে নতুন ১২টি ওয়ার্ড যুক্ত করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরু করে।  

বিভাগীয় সদর ও নবগঠিত মহানগর নিয়ে ময়মনসিংহে চলবে পরিকল্পিত উন্নয়ন। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তাবে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের ওপর। সচেতন নগরবাসী তাই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে ক্ষমতায় দেখতে চান।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, তিলোত্তমা ময়মনসিংহের ভিশনকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০১১ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিপিএমপি-২) এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় ময়মনসিংহ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এমএসডিপি) নামে একটি সংস্থা এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান এবং ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান- এ তিন ধাপে প্রস্তুত করা হয় মহাপরিকল্পনা। নগরবিদদের ভাবনা এবং সিটি প্রশাসক ইকরামুল হক টিটুর অভিজ্ঞতার আলোকে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, যানজট নিরসনে আধুনিক ফ্লাইওভার, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর নির্মাণ এবং শম্ভুগঞ্জকে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র করার কথা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়।

আরও পড়ুন>>> **জনবান্ধব ‘নগর সেবক’ চান তরুণেরা

ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমদাদুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, মহানগরের উন্নয়ন হবে মাস্টারপ্ল্যানে। এর আওতায় ময়মনসিংহবাসী স্বপ্ন দেখেন উন্নত ও আধুনিক মহানগরের। উন্নত জীবনমানের নিশ্চিয়তার পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়নের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক স্বার্থকে সামনে রেখে আলোকিত ময়মনসিংহ গড়ে তুলতে নগর ভবনের জন্য যোগ্য নেতৃত্বই অপরিহার্য।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।