চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম জনপদ নাহার চা বাগান। শহর থেকে এক ঘণ্টার ক্লান্তিকর পথ।
সম্প্রতি এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে এ পাহাড়ি জনপদের চিরসবুজ সৌন্দর্য ধরা পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজে চা পাতাগুলো যেন গাঢ় সবুজে গজিয়ে উঠেছে। এ বৃষ্টি শুধু দুর্ভোগ আর উৎপাদনের সমৃদ্ধির জন্যই নয়, পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্যও দারুণ সহায়ক।
সরেজমিনে নাহার চা বাগানে দেখা যায়, কারখানার অবশিষ্ট জায়গাটুকুকে ফেলে না রেখে তার মাঝেও চা চাষ করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে উন্নতমানের একটি চা কারখানা তৈরি পর জমির সঠিক ব্যবহারের দিকে নজর দেয় কর্তৃপক্ষ।
এর ফলেই ‘রুগ্ন চা বাগান’ থেকে ‘অপেক্ষাকৃত উন্নত’ চা বাগানের দিকে এখন ‘নাহার চা বাগান’। এ বাগানের উৎপাদিত প্রতিকেজি চায়ের নিলাম মূল্য ২৬০ টাকা। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে বাগানটির বাৎসরিক গড় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ কেজি চা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, একসময় খুব দুর্বল চা বাগান ছিল এটি। ২০০৬ সালে আমি যোগদান করার পর আলো জ্বালাবার জন্য মাত্র ১৬ টাকা দিয়ে ২টি কুপি-বাতি কিনে এনেছিলাম। চা বাগানের পরিত্যক্ত বাঙলোতে প্রবেশ করেই তখন বিষাক্ত সাপের খোষা পড়ে থাকতে দেখি। ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাত্রা শুরু করে বাগানটি।
তিনি আরও বলেন, এ বাগানের মোট আয়তন ৩৮০ একর (১৫৪ হেক্টর)। শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চারশ। ২০০৫ সালে বাগানটির বাৎসরিক উৎপাদন ছিল মাত্র ৩৬ হাজার কেজি। বর্তমানে ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কেজি। আমরা আশা করছি, এভাবে বৃষ্টিপাত হলে অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রায় ২ লাখ কেজি চায়ের উৎপাদন হবে।
আমাদের চা শ্রমিকদের জন্য উন্নত বাসস্থান ও সেনিটেশন ব্যবস্থা এবং উন্নত রেশনের সুবিধা দেওয়ায় হয় বলেও জানান ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য।
নাহার চা বাগান সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়া ফলে সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্থাৎ ১ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৭ সালে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার। শুরুর দিকে স্টাফদের জন্য দু’টি ও শ্রমিকদের জন্য সাতটি শনের ঘর ছিল। এখন স্টাফদের জন্য ১০টি পাকা বাড়ি এবং শ্রমিকদের জন্য ৯৩টি পাকা ঘর রয়েছে। এছাড়া রয়েছে একটি চেয়ারম্যান বাঙলো এবং দু’টি সহকারী ব্যবস্থাপকের বাঙলো।
শ্রমিক দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, সব ঘরেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা- আমাদের বাগানের মালিক যে আটা খেয়ে থাকেন, আমরাও সেই আটা খেয়ে থাকি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৯
বিবিবি/ওএইচ/