বাড়ি গিয়ে বুঝতে পারেন শখের এবং মূল্যবান স্বর্ণ খুইয়ে ফেলেছেন তিনি। একদিন পর ৪ এপ্রিল হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের সন্ধানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে ঘুরাফেরা করতে থাকেন হতোদ্যম এ তরুণ।
বিষয়টি জানার পর তৎক্ষণিকভাবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেন আমর্ড পুলিশের কর্মকর্তারা। শনাক্ত করেন স্বর্ণ লুকিয়ে ফেলা ব্যক্তিকে। পরে বিমানবন্দরের ওই কর্মীকে ডেকে এপিবিএন কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে স্বর্ণ পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দেন সেই ব্যক্তি। এরপর আমর্ড পুলিশ সেই স্বর্ণ তুলে দেয় মেহেদীর হাতে। হাসি ফেরে এই রেমিট্যান্স-যোদ্ধার মুখে। আর্মড পুলিশ সূত্র জানায়, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মেহেদী হাসান আন্তর্জাতিক আগমনী বেল্ট থেকে তার লাগেজ নিয়ে যান। এসময় লাগেজ থেকে সঙ্গে আনা ৯০ গ্রাম স্বর্ণ বেল্টের নিচে পড়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিমানবন্দরের এক কর্মী কিছুক্ষণ পর ওই স্বর্ণ দেখতে পেয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দ্রুত সে অলঙ্কার পকেটে ঢুকিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বাসায় পৌঁছার পর ওই প্রবাসী তার স্বর্ণ না পেয়ে পরদিন ৪ এপ্রিল বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে আসেন এবং লাগেজ থেকে স্বর্ণ হারানোর বিষয়টি জানান। পরে ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজের রিভিউ দেখে বিমানবন্দরের ওই কর্মীকে আর্মড পুলিশ অফিসে নিয়ে আসা হয়। তারপর সেই স্বর্ণ উদ্ধার করে মেহেদীর হাতে তুলে দেন আর্মড পুলিশ কর্মকর্তারা।
মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আর্মড পুলিশ যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আসলে পুলিশ সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে গেছে। খুব দ্রুত ও অল্প সময়ের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাকে আমার মালামাল ফিরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আমি বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ নিয়ে গর্বিত।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময়ে বিমানবন্দর সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল যে, যাত্রী এলে তাদের মালামাল হারিয়ে যেতো, চুরি হতো বা মালামাল খোয়া যেতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব ধারণা অনেকাংশে সত্যও ছিল। তবে বর্তমানে বিমানবন্দরে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার পরিবীক্ষণ ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখন কোনো যাত্রীর লাখ টাকার স্বর্ণ ফেলে যাচ্ছে। কোথা থেকে পড়লো কোথায় পড়লো, সে কোন যাত্রী কোন গাড়িতে করে কোথায় গেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে বাড়ি থেকে ডেকে এনে স্বর্ণ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আলমগীর বলেন, একটা সময় এমন ধারণা অলিক স্বপ্ন বা অকল্পনীয় ছিল। বর্তমানে প্রযুক্তির সহযোগিতায় আমরা যাত্রীদের মালামাল ফিরিয়ে দিচ্ছি। পুলিশ যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ একটি অল্প মূল্যের জিনিস ফেলে গেলেও যেন ফেরত পায় সে চেষ্টা থাকে আমাদের। মাঝে মাঝে আমরা মূল মালিককে খুঁজে না পেলে তা লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের মাধ্যমে নিলামে দিয়ে দেওয়া হয়। হারানো মালামাল ফেরত পাওয়ায় মানুষের মাঝে আস্থা ফিরে আসছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
টিএম/এমএমআই/এইচএ/