ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বছরের অর্ধেক সময়ই দূষিত বাতাসে নিমজ্জিত থাকে ঢাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
বছরের অর্ধেক সময়ই দূষিত বাতাসে নিমজ্জিত থাকে ঢাকা

ঢাকা: গত ২০১৮ সালের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৯৭ দিনই ঢাকা শহর নিমজ্জিত ছিল দূষিত বাতাসে। তার আগের বছর ২০১৭ সালের ১২০-১৬০ দিনই ছিল দূষিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের এই দু’টি তথ্য তুলে ধরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গোলটেবিল আলোচনায় বলা হয়েছে, বছরের অর্ধেক সময়ই ডুবে থাকে দূষিত বাতাসে। এই বায়ুদূষণ সময়ের বিবেচনায়ও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর কলাবাগানে পবার কার্যালয়ে আয়োজিত ওই গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘বায়ু দূষণে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য: দূষণ নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বনাম প্রকল্প ভাবনা’ শীর্ষক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।

ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, ক্যাব নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ, মো. সেলিম প্রমুখ।  

বক্তারা বলেন, ঢাকার বাতাসে দ্রুত দূষণকারী পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে। আর দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সরকারি। বায়ু দূষণ রোধে কেবল প্রকল্প নয়, এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নজরদারি চাই।

বায়ুদূষণের চিহ্নিত উৎসসমূহ নিয়ন্ত্রণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অংশীজনকে নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, বায়ু দূষণের অচিহ্নিত উৎসসমূহ চিহ্নিত ও তা নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ অধিক জরুরি। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দের মাধ্যমে হোক।

আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যও তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদন মতে, বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে। আর বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
 
আলোচনায় তুলে ধরা হয়, পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকারের ‘পরিবেশ অধিদপ্তর’ রয়েছে, যার লোকবলের সংখ্যা ৪৬৫। সারাদেশের ২১টি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস রয়েছে। এই অধিদপ্তর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুসারে পরিচালিত। এছাড়া পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকার পরিবেশ আদালত আইন প্রণয়ন করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ আদালত আইন অনুসারে মহাপরিচালককে আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।  পবার গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা।  ছবি: বাংলানিউজপরিবেশ অধিপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০০৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত উচ্চ আদালতে পরিবেশ সংক্রান্ত রিট হয়েছে ৯৩৯টি। এছাড়া পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর গত নয় বছরে ঢাকার পরিবেশ আদালতে মামলা হয়েছে ১৭২টি। পরিবেশ সংক্রান্ত হাতেগোনা যে কয়টি মামলা এ আদালতে দায়ের হয়েছে, সাক্ষী উপস্থিত না হওয়াসহ নানা কারণে তাও ঠিকমতো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ১৭২টি মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৮২টি। এ আদালতে ২০১০ সালে পরিবেশ-বিষয়ক মামলা হয়েছে ৬০টি। ২০১১ সালে ৩৩টি, ২০১২ সালে ২৪টি, ২০১৩ সালে ৯টি, ২০১৪ সালে ৯টি, ২০১৫ সালে ৮টি, ২০১৬ সালে ৪টি এবং ২০১৭ সালে ৬টি মামলা হয়েছে।
 
আলোচনায় আরও বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বিদ্যমান ইটভাটার ৬৬ শতাংশই আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ হিসেবে বায়ু দূষণ কমে যাওয়ার কথা। এছাড়া বায়ু দূষণ রোধে সংস্থাটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন ইটভাটায় ১১৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। ২৭৯টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জরিমানা আদায় হয় দুই কোটি টাকা। যানবাহনের বিরুদ্ধে ৩৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ১১৯টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ২০ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
 
ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেখ করে আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির দূষণ এবং নির্মাণকাজের দূষণ হ্রাসে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এ ঢাকা আজ দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
 
বায়ু দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিত করে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (ডিএসসিসি, ডিএনসিসি, ওয়াসা, রাজউক ইত্যাদি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় গোলটেবিল আলোচনায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।