বাংলানিউজের সরেজমিন প্রতিবেদনে দেখা মেলে মিমের। কেবল উঠতি বয়স, অনেক স্বপ্ন তার।
এটি এক ধরনের চর্ম রোগ। মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের কোনো জায়গা বাকি নেই। বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা মিমকে ঘৃণা না করলেও মিম নিজেই এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে।
মিমের শরীরের সব জায়গা থেকে চামড়া যেন খসে পড়ছে। মাঝেমধ্যে সেসব জায়গা ফেটে রক্তও ঝরে। এভাবে ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে মিম।
রুপধন বন্দর আমিরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিকভাবেই মিম সহপাঠীদের সঙ্গে বসে ক্লাস করছে। জন্মগত রোগ হওয়ায় সহপাঠীরাও এটি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছে।
প্রতিবন্ধী, বা অজানা কোনো রোগের মানুষ চিরকালই সমাজে উপেক্ষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। কিন্তু মিমের বেলায় ঠিক তার উল্টো। সহপাঠীরা কেন গ্রামের কোনো মানুষই তাকে এড়িয়ে চলে না। সবাই মিমকে সুদৃষ্টিতেই দেখে এবং সহানুভুতি দেখায়।
মিমের সহপাঠী ইসরাত জাহান ও সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘আমরা সব সময়ই ওর (মিমের) পাশেই ক্লাসে বসি। আমরা কখনোই মিমকে অন্য চোখে দেখিনা। আমাদের বোনের মতোই দেখছি, হাসছি, খেলছি। ’
মিমের মা পারভীন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোর স্বামী মারা গেছে দুই বছর অইছে, একমাত্র মাইয়াডার (মেয়ে) জন্ম থেকেই রোগ, অন্যের বাড়িতে কাম (কাজ) কইরা খাই, ঘরের চুলায় আগুন ধরে না দুই তিনদিনেও। মোর কপালডাই পোরা। মাইয়াডারে অনেক ডাক্তার দেখাইছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত সুস্থ হয় নাই।
তিনি আরও বলেন, মাইয়াডারে ডাক্তার দেখাইতে দেখাইতে ওর বাবা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। মেয়ের সুস্থতার জন্য দেশের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
মিম আক্তার বলে, জন্ম থেকেই এই রোগ। রোদে থাকতে পারিনা, খুব যন্ত্রণা হয়। মাঝে মধ্যে শরীর থেকে রক্তও ঝড়ে। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় ভুগছি।
সহপাঠীদের কাছ থেকে বিরুপ ব্যবহার পায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিম বলে, আমাকে স্যার, ম্যাডাম এবং শিক্ষার্থীরা খুবই ভালোবাসে। আমাকে কোনো সময়ই অন্য চোখে দেখে না তারা।
মুক্তিযোদ্ধা মণি মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ছোট থেকেই মিমের মেধা ভালো দেখে আসছি। মানসিক অবস্থা ভালো থাকলে লেখাপড়া আরও ভালো হতো। প্রয়োজনে আমরা মিমের উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করবো।
রুপধন বন্দর আমিরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মিমকে অন্য চোখে দেখিনা। ওর চিকিৎসার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।
এ বিষয় ফার্মগেট আলরাজি হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, এটি জেনিটিক সমস্যা। শীতকালে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এ রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে রোগীকে দেখার পরে সাময়িকের জন্য কিছু চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
মিমের চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠানো এবং যোগাযোগের ঠিকানাঃ ০১৭৫১৬৯৩৪০৮ (মিমের মা পারভীন বেগম) অথবা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন, চলতি হিসাব নম্বর: ০২০০০০৩২০৪৪৪৫, অগ্রণী ব্যাংক লি., পাথরঘাটা শাখা, বরগুনা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
আরএ