ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ফায়ারম্যান সোহেল রানার বাড়িতে শোকের মাতম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
ফায়ারম্যান সোহেল রানার বাড়িতে শোকের মাতম

কিশোরগঞ্জ: সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ফায়ারম্যান সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম সোহেল রানার মৃত্যুতে পরিবারটি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কেওরুলা গ্রামে সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।  

স্থানীয় লোকজন জানান, সোমবার (০৮ এপ্রিল) সকালে সিঙ্গাপুর থেকে সোহেল রানার মামাতো ভাই শফিকুল ইসলাম ফোন করে সোহেলের ছোট ভাই রুবেলকে প্রথমে মৃত্যুর সংবাদটি দেন।

 

খবরটি শোনার পর থেকে সোহেল রানার কেওরুলা গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনেরা আসতে থাকেন। এ সময় বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে শোকাগ্রস্ত হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।  

মা হালিমা খাতুন বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবা নূরুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনিও। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে বোন সেলিনা আক্তার সবার বড়। বিবাহিতা সেলিনা আক্তার স্থানীয় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।  

ভাইদের মধ্যে সোহেল রানা  ছিলেন সবার বড়। ছোট দুই ভাই কলেজে ও একজন স্কুলে পড়ছেন। সোহেল রানার উপার্জনের উপরেই সংসারটি নির্ভরশীল ছিল।  

তার অবর্তমানে সংসার চালানো দায় এবং ভাইদের লেখাপড়ার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলেই বলাবলি করছিলেন প্রতিবেশীরা।  

সোহেল রানা ২০১০ সালে চৌগংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে করিমগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসচি পাস করেন।  

চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান খোকন বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়ার প্রতি সোহেল রানার খুব আগ্রহ ছিল। আর্থিক অনটন থাকায় তিনি এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। এসএসসি পাসের পর তিনি সংসারের হাল ধরার জন্য অটো চালাতে শুরু করেন। পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।  

এরপর ২০১৫ সালে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে। তিনি কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  

স্থানীয়রা বলেছেন, সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। ফেরার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ফের বাড়িতে আসবেন। কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হলো না।  

গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নি নির্বাপণ ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের সময় তিনি গুরুতর আহত হন।  

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সোহেল রানার মতো এমন ভালো ছেলে এলাকায় খোঁজে পাওয়া কঠিন। ছোটবেলা থেকেই সে মানুষের সেবা করে করতো। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এদিকে সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সোহেল রানার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরে বাহিনীর পক্ষে ফায়ারম্যান সোহেলের মরদেহ গ্রহণ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন।

রাতে সোহেলের মরদেহ ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর সোহেলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জের ইটনায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।