ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকারীদের শাস্তির দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকারীদের শাস্তির দাবি মানববন্ধনে কর্মজীবী নারী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও স্থানীয়রা। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ফেনীর কর্মজীবী নারীরা।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ফেনী জেলার সভাপতি কাজী আবদুল বারী, প্রধান বক্তা ছিলেন কর্মজীবী নারী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেত্রী রোকেয়া সুলতানা আন্জু।

কর্মজীবী নারী ফেনীর সমন্বয়ক ও ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ছালেহা বেগমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা জাসদের সহ-সভাপতি আবুল খায়ের, কোষাধ্যক্ষ মো. জাফর ইমাম, দফতর সম্পাদক সিপন হাজারী, সনাতন বিষয়ক সম্পাদক বিনোদ বিহারী বিশ্বাস।

এছাড়া অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কর্মজীবী নারী সংগঠনের ছাগলনাইয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা আক্তার, পরশুরাম উপজেলা কর্মজীবী নারীর আহ্বায়ক রোকশানা আক্তার রুমী।  

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কর্মজীবী নারী সদস্যরা ও সর্বস্তরের সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।  

মানববন্ধনে বক্তারা দগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেনী জেলা কর্মজীবী নারী সংগঠন। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।  

এর আগে শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।  

দগ্ধ ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্যে, গত ২৭ মার্চ সকাল পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে সেই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। তখন সেই ছাত্রী নিজের সঙ্গে আরও তিন থেকে চার জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে সিরাজউদ্দোলা অন্যদের ঢুকতে না দিয়ে কেবল সেই ছাত্রীকে নিয়ে যান। এরপর দরজা আটকে তিনি ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এমনকি পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর সিরাজউদ্দৌলা ওই ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। তখন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় থাকা ওই ছাত্রীর ছোট ভাই অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে যায়। অধ্যক্ষ তখন তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। সেজন্য ছুটির আবেদন করতে এসে পড়ে যায়।

সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। তখন সে স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরের দিন সিরাজউদ্দৌলাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।

দগ্ধ করার ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রীর ভাই জানান, শনিবার (৬ এপ্রিল) আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিলো তার বোনের। সকালে মাদ্রাসায় গেলে একজন ওই ছাত্রীকে বলে যে, তার এক বান্ধবীকে কারা যেনো ছাদে মারধর করছে। এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকা পরা চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। এক পর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান।

সোমবার (৮ এপ্রিল) এ ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়েছে। এরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদ্রারাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
এসএইচডি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।