মা-বাবা, ভাইয়েরা না থাকলেও বাকি স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় রাফির বাড়িতে বৃদ্ধ দাদা মাওলানা মোশারফ হোসেন ছাড়াও রয়েছেন সকিনা খাতুন নামে তার খালা।
৬ এপ্রিল ঘটনার পর নুসরাতকে হাসপাতালে নেয়ার পর বাড়িটি গত কয়েকদিন সুনশান নীরবতার মধ্যে থাকলে মৃত্যুর পর স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে জড়ো হচ্ছেন। সবাই কাঁদছেন আর অপরাধীদের বিচার চাইছেন।
এদিকে রাফির বাড়িতে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
কাঁদতে কাঁদতে দাদা মাওলানা মোশারফ হোসেন বলছিলেন, নাতিন আমার অনেক কস্ট করেছে। সারা অঙ্গ পুড়ে গিয়ে আজ ৫টা দিন অমানুষিক কষ্ট করে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। নাতিনকে আল্লাহ জান্নাত নসীব করুক। আমার নাতিনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মামুন হোসেন নামে নূসরাতের প্রতিবেশী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটিকে আমরা চিনি। আমাদের জানা মতে মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ছিলো। ওর এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।
সাইদুর ইসলাম নামের ষাটোর্ধ্ব আরেকজন জানান, নুসরাতের এমন ন্যাক্কারজনক হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে গ্রামবাসী। এ ঘটনায় দোষী সিরাজ উদ-দৌলাসহ সবার বিচার চাই আমরা।
আবদুস সাত্তার (৭০) নামের গ্রামের আরেকজন বলেন, আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমাদের নাতনি নুসরাত আর আমাদের মাঝে নেই।
** নুসরাতের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের বোর্ড গঠন
তিনি জানান, বিকেলে সোনাগাজী আল হেলার একাডেমির পাশে বড় কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশে নুসরাতকে শায়িত করা হবে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।
এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার রাতে চলেই গেলো ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।
এদিকে ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
** নুসরাতের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড়
** শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলো নুসরাত
** নুসরাতের মৃত্যুতে, অপরাধীর ক্ষমা নাই: এমপি মাসুদ
** নুসরাতের মৃত্যুতে বারবার অজ্ঞান হচ্ছেন দুই ভাই
** নুসরাতের মৃত্যুতে এমপি শিরিন আখতারের শোক
** সোনাগাজী সাবের পাইলট মো. স্কুল মাঠে হবে নুসরাতের জানাজা
** মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
** নুসরাতের মৃত্যুতে স্তব্ধ ফেনী, দোষীর ফাঁসি দাবি
** শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলো নুসরাত
** বেঁচেই গেলে নুসরাত! ǁ মনদীপ ঘরাই
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এমএ/