ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘আগুন দিল কেন, আমি তো এমনিতেই মইরা যামু’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
‘আগুন দিল কেন, আমি তো এমনিতেই মইরা যামু’ আগুনে দগ্ধ ষাটোর্ধ্ব খাতুন্নেছা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ‘আমি বুড়া হইছি, এমনিতেই মইরা যামু। কেন তারা আমার গায়ে আগুন দিল। আমার তিন ভাইজির গায়েও আগুন দিছে’ এভাবেই আগুনে পোড়ার কষ্টের বর্ণনা দিচ্ছিলেন দগ্ধ ষাটোর্ধ্ব খাতুন্নেছা।

দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে তিন ভাতিজিসহ দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি।  

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ভোরের দিকে নরসিংদীর রায়পুরার একটি গ্রামে তাদের ওপর আগুন জ্বেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

 

দগ্ধ বাকিরা হলেন- তিন বোন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী প্রীতি আক্তার (১১), এসএসসি পরীক্ষা দেয়া মুক্তামনি (১৬), অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুইটি আক্তার (১৩)।  

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন খাতুন্নেছাকে দেখা যায়, একজনকে ধরে কিছুক্ষণ পরপরই বেড থেকে উঠে বসছেন, আবারও শুয়ে পড়ছেন। কোনোভাবেই যেন শান্তি পাচ্ছেন না তিনি। জ্বালা পোড়ার কারণে এদিক সেদিক তাকিয়ে বির বির করে কি-যেন বলছেন এই বৃদ্ধা।  

একটু এগিয়ে দেখা যায়, মুখে, কপালে ও দু’হাতে আগুনে ঝলসানোর চিহ্ন। কাউকে দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলতে থাকেন, ‘আমি বুড়া মানুষ আমার গায়ে তারা কেন আগুন দিল। জ্বালা যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। আমার তিন ভাইজির গায়েও আগুন দিছে ওরা। ’

দারিদ্র্য ও বয়সের ভারে অনেকগুলো দাঁত পড়ে গেছে খাতুন্নেছার। ঘটনার সময় ধোঁয়ার কারণে গলার ভিতরের অংশও পুড়ে গেছে তার। কিছুই খেতে পারছেন না তিনি।  

এ সময় তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন পাশে থাকা দায়িত্বরত নার্স। এক পর্যায় তার পাশের বেডে থাকা তিন ভাইজির কথা জানতে চাইলে, তারাও ভালো আছেন বলেই জানান নার্স।

দগ্ধ প্রীতির বড় বোন রত্না আক্তার জানান, প্রতিবেশী শিপন ও কাজলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। অনেকদিন আগে রায়পুরায় একটি হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি করা হয় তার দুই ভাই সোহাগ ও বিপ্লবকে। তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অভিযোগ করে রত্না বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তার বাবা শামছুল হক মারা যান। এরপর থেকেই তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে দুর্বৃত্তরা।

তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরে বাসাতেই সবাই ঘুমিয়ে ছিল। তখন পাশের বাড়ির শিপন, কাজল, রবিন ও লোকমানসহ আরও কয়েকজন তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত অবস্থাতেই তারা দগ্ধ হয়।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নওয়াজেশ খান বাংলানিউজকে বলেন, বয়স্ক নারীসহ মুক্তা ও প্রীতি এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন। আর সুইটি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।  

‘সবারই হাতে ও পায়ে সামান্য বার্ন আছে। তবে বয়সের কারণে বৃদ্ধ নারী একটু বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। সবারই ইনহেলেশন বার্ন থাকলেও আশা করি তারা ভালো হয়ে যাবেন,’ বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এসএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।