ঢাকা, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নুসরাতের বাড়িতে শোকাতুর সহপাঠী-প্রতিবেশীরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
নুসরাতের বাড়িতে শোকাতুর সহপাঠী-প্রতিবেশীরা নুসরাতকে একনজর দেখতে সহপাঠীসহ প্রতিবেশীদের ভিড়/

সোনাগাজীর নুসরাতের বাড়ি থেকে: অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে নুসরাত জাহান রাফি। রাফির মৃত্যুর খবর শুনে তার গ্রামের বাড়িতে তৈরি হয়েছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সকালে বাড়িটিতে সুনশান নীরবতা থাকলেও বেলা বাড়তে বাড়তে লোক সমাগম বেড়ে যায়। বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ লোকে লোকারণ্য নুসরাতের বাড়িটি। 

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ছিল নুসরাতের ফিকহ ২য় পত্রের পরীক্ষা। দুপরের পরীক্ষা শেষে নুসরাতের মুখটা এক পলক দেখার জন্য ভিড় জমায় তার সহপাঠীরা।

এসময় তার সহপাঠীদের আহাজারিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠতে থাকে পুরো এলাকা। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে তার সহপাঠীরা। তারা বিশ্বাসই করতে পারছেনা তাদের বন্ধু কফিনে আসছে মরা লাশ হয়ে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে দেখা যায় তার বাড়িতে বৃদ্ধ দাদা মাওলানা মোশারফ হোসেন ছাড়াও রয়েছেন খালা সকিনা খাতুন। নুসরাতের মৃত্যুর খবর শুনে বৃদ্ধ দাদা এবং প্রতিবেশীরাও মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। এদিকে রাফির দাফনের প্রস্ততিও শেষ হয়েছে আল হেলাল একাডেমির পাশের কবরস্থানে। তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ওই মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি পিকেএম এনামুল করিম, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজসহ প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ।

৬ এপ্রিল ঘটনার পর নুসরাতকে হাসপাতালে নেওয়ার পর বাড়িটি গত কয়েকদিন সুনশান নীরবতার মধ্যে থাকলে মৃত্যুর পর কাছের এবং দূরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে জড়ো হচ্ছেন। সবাই কাঁদছে আর অপরাধীদের বিচার চাইছে।

এদিকে নুসরাতের বাড়িতে রাত থেকে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। নুসরাতের দাদা মাওলানা মোশারফ হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, নাতিন আমার অনেক কস্ট করেছে। সারা অঙ্গ পুড়ে গিয়ে আজ ৫টা দিন অমানসিক কষ্ট সহ্য করে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। নাতিনকে আল্লাহ জানাত নসীব করুক। আমার নাতিনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সাইদুর ইসলাম নামের ষাটোর্ধ্ব আরেকজন জানান, নুসরাতের এমন ন্যাক্কারজনক হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে গ্রামবাসী। এ ঘটনায় দোষী সিরাজ উদ-দৌলাসহ সবার বিচার চাই আমরা।  

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।  

নুসরাতের পরিবারের ভাষ্য মতে, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। অপরদিকে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার রাতে চলেই গেলো ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এসএইচডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।