পুরনো দিনের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুনের আয়োজনে এখন ব্যস্ত সবাই। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর এসব আয়োজনের সঙ্গে বাঙালিদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে।
বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। নতুন জামা-কাপড় কেনা, পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো, বৌদ্ধবিহারে ধর্মীয় গুরুদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া সর্বোপরি মৈত্রী পানিবর্ষণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সব মিলিয়ে পুরো জেলার সবকটি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন একত্র হয়েছে বর্ষবরণে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও শনিবার (১৩ এপ্রিল) থেকে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উদযাপন কমিটির প্রচার সম্পাদক নুমং মারমা বাংলানিউজকে জানান, উৎসবের প্রথম দিন ১৩ এপ্রিল সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে মিনি ম্যারাথন দৌড়। ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরপর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ এপ্রিল বিকেল ৩টায় শহরের উজানী পাড়া খেয়াঘাটে বুদ্ধ মূর্তি স্নান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরপর শহরের বিভিন্ন পাড়ায় রাতব্যাপী পিঠা তৈরি করা হবে। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল বিকেল ৩টা থেকে শহরের রাজার মাঠে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর সঙ্গে থাকবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধুলার আয়োজন এবং সন্ধ্যায় মারমা শিল্পী গোষ্ঠী ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদযাপন কমিটির সভাপতি থেওয়াং এবং সাধারণ সম্পাদক কোকোচিং মারমা বাংলানিউজকে জানান, উৎসবকে বর্ণাঢ্য এবং সুশৃঙ্খল করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই মহাসমারোহে পালন করা হবে। এটি মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও জেলার বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের অংশগ্রহণে তা হয়ে ওঠে সর্বজনীন। এ উৎসবের মাধ্যমে বান্দরবানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে এটাই আমাদের কাম্য।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল সাংগ্রাইং আবাহন বা মূল উৎসব উদযাপন করা হবে। এর আগে ১৩ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ উৎসবের সূচনা হবে। এতে জেলায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বান্দরবান জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, সাংগ্রাই উৎসব উৎযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা, ম্রোচেটের সহায়তায় সাংগ্রাই উৎসব পালনে চার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এছাড়াও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন।
এ পানিবর্ষণ উৎসবের মধ্য দিয়েই মার্মা আদিবাসীরা বিদায়ী বছরের সমস্ত দুঃখ বেদনা, পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ধুয়ে মুছে ফেলে নতুন বছরের জন্য একে অপরের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে নেয়। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহব্যাপী মার্মা জনপদগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এনটি