টানা কয়েক দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে নুসরাতের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) তারানা হালিম নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়ে সমাজের কিছু মানুষের অমানবিকতার রূপ তুলে ধরেছেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া নুসরোতের পায়ের অংশের একটি ছবি দিয়ে ‘নুসরাত তুমি নও, বিবেক এখন লাইফ সাপোর্টে’- শিরোনামে ফেসবুকে লিখেছেন তারানা হালিম।
তিনি লিখেছেন, নুসরাত, তোমার অগ্নিদগ্ধ শরীর, অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, ব্যান্ডেজে বাঁধা শরীরের মাঝে বেরিয়ে থাকা ফুটফুটে সুন্দর মুখ আর পা-জোড়া, তোমার ‘ডায়িং ডিক্লারেশন’- এর দৃপ্ত উচ্চারণ- ‘এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো’- আবারও এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করলো যে, সমাজের বিবেক এখন লাইফ সাপোর্টে, তুমি নও। তুমি বরং লাইফ সাপোর্ট থেকে এই অচল সমাজের অমানবিকতাকে প্রতিবাদ করতে বলে শান্তির জগতে চলে গেছো।
‘নারী-শিশু ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা এখন সড়ক দুর্ঘটনার মতোই কেবল সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে। এটি হতে দেওয়া যাবে না। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির প্রচেষ্টার অভিযোগ করার জন্য তোমার ভাষ্যমতে, মিথ্যা কথা বলে কয়েকজন নারী তোমাকে ছাদে নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দিলে, তুমি তাতে রাজি না হয়ে ‘এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো’ বললে, তোমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তুমি তাদের ‘নারী কন্ঠে’র কথা বলেছো। ’
তারানা হালিম বলেছেন, দুঃখ এটাই, কাকের মাঝে ‘নারী কাক’ বা ‘পুরুষ কাক’- এমন লিঙ্গ বিভাজন করি না আমরা, কিন্তু মানুষ বিভাজিত হয়ে যায় নারী ও পুরুষে। একটি কাক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে, মারা গেলে অনেক কাক কোথা থেকে যে এসে জড়ো হয়! তাড়স্বরে আওয়াজ করে। ওরা কী চিৎকার করে, না কাঁদে, জানি না। কিন্তু কিছু একটা করে। আর আমরা? যখন তোমার ডায়িং ডিক্লারেশনে, কয়েকজন নারী তোমার গায়ে আগুন দিয়েছে বলো, তখন মনে হয় মানুষ কি কাকের মতো হতে পারে না? মানুষ না-ই হোক। কারণ আমরা মানুষতো নই-ই, কাকও নই। তুমি যখন তোমার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে, তখন মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা তোমার পক্ষে লড়ে গেলে, তুমি শক্তি পেতে। কিন্তু তা হয়নি। যখন ফায়ার সার্ভিসের লড়াকু সোহেল জীবন বাঁচাতে জীবন দেয়, জসিম নামে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটি চারতলার গ্রিল বেয়ে উঠে আগুন থেকে নারীর জীবন বাঁচায়, তখনই একদল মানুষ আরেক নারীর গায়ে আগুন দেয়। এতো ছোট একটি জীবন কেবল মানুষের ভালো করার জন্যই বড় সংক্ষিপ্ত- সেই জীবনে এতো হিংসা, এতো লোভ, এতো প্রতিহিংসা, এতো অমানবিকতা, এতো পাষণ্ডতা!
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির পরিচয় দিয়ে অ্যাডভোকেট তারানা হালিম আরও লিখেছেন, নুসরাত, তুমি বলেছো- প্রতিবাদ করে যাবে, তোমার কাজ তুমি করেছো। তোমার কাছ থেকে শিখে এবার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের প্রতিবাদ করার পালা। শেষ থেকে শুরু হোক, নতুন করে পুরানো প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদে তোমার সহযাত্রী হবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এমআইএইচ/টিএ