রক্তমাখা মুখে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই চাঁদাবাজদের হাতে বেদম মারধরের শিকার হওয়ার বিচার চাইছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ঠিকাদার মোহাম্মদ ওমর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওমর এই হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিচার চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ডিপিডিসির গুলশান প্রকল্প অফিসের সামনে ওমরের ওপর এই হামলা হয়। আহতাবস্থায়ই ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে ওমর তুলে ধরেন হামলার কারণ ও এর বিস্তারিত বর্ণনা। তার ভাষ্যে, ডিপিডিসির কাজ পেয়েও দুর্বৃত্তদের দাবির মুখে চাঁদা না দেওয়ায় জীবননাশী হামলার শিকার হতে হয় তাকে। তিনি জানান, প্রায় ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ডিপিডিসির একটি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন তিনি। এরজন্য পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল জনৈক রিয়াদের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু লোক। বৃহস্পতিবার গুলশান প্রকল্প অফিসে গেলে আবারও চাঁদা দাবি করে রিয়াদ ও তার লোকজন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয়, অফিসের বাইরে নিয়ে এসে ওমরকে মারধর করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে ওমর বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঠিকাদারি ব্যবসা করছি। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ১০ শতাংশ ছাড়ে ডিপিডিসির একটি কাজ পাই আমি। আমার কাজের এলাকা ভাটারা থানার পেছনে। কাজ পাওয়ার পর থেকেই গুলশান ডিপিডিসি প্রকল্প অফিস সংশ্লিষ্ট একটি চক্র আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকেই তারা এমন চাঁদা দাবি করে বলে শুনেছি। কিন্তু আমি চাঁদা দিতে রাজি হইনি। সেদিনও তাদের চাওয়া চাঁদা না দেওয়ায় আমাকে অফিস থেকে বাইরে বের করে মারধর করে। ঘটনার অনেক সাক্ষী আছে। অফিসে আনসার সদস্যরাও ছিল। কিন্তু তাদের সামনেই আমার জীবননাশে এভাবে হামলা করা হয়।
ওমর বলেন, এই কাজতো দেশের জন্য। আমরা ঠিকাদারেরা যে কাজ করি, তার অর্থতো দেশের মানুষেরাই দেয়। অবৈধ খাতে কাউকে আমার টাকা দিতে হলে সেই টাকাওতো আমার উসুল করতে হবে। আর সেই টাকাতো জনগণের পকেট থেকেই আসবে। আমি সেটা হতে দিতে চাইনি। এখন টেন্ডার অনলাইনে পাওয়া যায়। কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। আর এই মাস্তানেরা আমাদের থেকে চাঁদাবাজি করে। দিতে রাজি হইনি বলে আমার ওপর এই হামলা করা হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় সেদিনই রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ওমর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান। মামলায় রিয়াদকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের দুই দিন পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন। আসামিদের রোববার (১৪ এপ্রিল) আদালতে হাজির করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে এখনো আটক করা যায়নি মামলার মূল আসামি রিয়াদকে।
এই হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়েছেন ওমর। এজন্য তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। দুর্বৃত্তরা ডিপিডিসি অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে বলেও অভিযোগ তার। তিনি বলেন, স্থানীয় এই ছেলেপেলেদের কাছে আমরা ঠিকাদাররা এক প্রকার জিম্মি। এর সঙ্গে অফিসের কিছু লোকজনও জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজ চেক করলে সন্ত্রাসীসহ তাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করা যাবে। এরা এই অফিসকেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ