ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নববর্ষের আনন্দ নেই খুলনার অর্ধ লাখ শ্রমিকের

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
নববর্ষের আনন্দ নেই খুলনার অর্ধ লাখ শ্রমিকের

খুলনা: সবাই পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ব্যস্ত। কিন্তু এই আনন্দ প্রভাব ফেলছে না খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো শ্রমিকদের পরিবারের কাছে পহেলা বৈশাখ যেন এক দীর্ঘশ্বাসের দিন।

শ্রমিকরা জানান, নববর্ষে সবার বাসায় যখন উৎসব চলছে তখন পাটকল শ্রমিকদের পরিবারে কেবলই হাহাকার। বেতন বোনাসের দাবিতে রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের দিনও খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।

প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, ঠিকমতো দু’মুঠো খেতে পারছেন না শ্রমিকরা। বেতন না থাকায় অনেকের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো পহেলা বৈশাখ নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে তিন বেলা খাবার জুটছে না, আমাদের আবার নববর্ষ।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সবাই নববর্ষ পালন করছে। আর পাটকল শ্রমিকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের মুখে নেই হাসি। উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে নতুন বছর শুরু করছেন তারা রাজপথে সংগ্রাম করে।

তিনি জানান, খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, দৌলতপুর, খালিশপুর, ইস্টার্ন, আলিম এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই ও কার্পেটিং জুটমিলের স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। খুলনাঞ্চলের ৯টিসহ সারাদেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের ১০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বৈশাখের দিনও রাস্তায় নেমেছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজ মুরাদ হোসেন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া পরিশোধ, কর্মরত শ্রমিকদের স্থায়ীকরন, গ্র্যাচুইটি-পিএফ ফান্ডের টাকা পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে তৃতীয় দফা রাজপথে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নববর্ষের আনন্দ ম্লান করে বিক্ষোভ মিছিল করছি।  

এর আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবরোধ, ধর্মঘট করেছেন। আর এতে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো গোটা শিল্পাঞ্চল। শ্রমিক ও কর্মচারীদের এসব আন্দোলনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে নতুন বছরেও আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে খুলনায় শ্রমিক জনসভার মধ্য দিয়ে পাটকল ধর্মঘটসহ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ।

খুলনা মহানগীর খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে অনুষ্ঠিত শ্রমিক জনসভা থেকে তৃতীয় দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোববার পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল, আগামী ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল টানা ৯৬ ঘণ্টা পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। এছাড়া আগামী ২৫ এপ্রিল গেটসভা এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার পাটকল ধর্মঘটসহ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ।

শ্রমিক নেতারা জানান, ৬ এপ্রিল (শনিবার) ঢাকায় বিজেএমসি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতাদের  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফা বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় বিকেলে আবারও বিজেএমসি’র চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের নিয়ে ছোট পরিসরে  বৈঠক করা হয়। কিন্তু সেখানেও দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারেননি। সরকার টাকা দিলে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।  

কবে নাগাদ ওই টাকা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়। যার কারণে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৬৪ সপ্তাহের বেতন ও মজুরি ৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রয়েছে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।