ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনুপ্রেরণার উৎস সন্ধানে মঙ্গল শোভাযাত্রা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
অনুপ্রেরণার উৎস সন্ধানে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযা্ত্রা/ছবি: বাদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। নানা রূপ, নানা সুষমায় প্রাণোচ্ছ্বলতায় প্রতিটি দিনকে তারা বরণ করে নেয় অনাবিল পূর্ণতায়। বিশালতার মায়ায় ভালোবাসার বাঁধন এখানে মুক্ত, উদার, পঙ্কিলতা বিবর্জিত ও স্নিগ্ধ। তারা দুঃখ, জরা, ক্লেশকে জয় করতে জানে, জানে শত কষ্টে পিষ্ট হৃদয় নিয়েও স্বপ্নের বিশালতায় ভাসতে। 

শিল্প সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ উৎসবমুখর বাঙালি বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরে থাকে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে। চিরচেনা বাঙালি জাতির এই নতুন বছরকে সাজ সাজ রবে বরণ করার উৎসবটি বাঙালিয়ানার মূল ঐতিহ্যের অন্যতম।

তাই নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় বেশ কয়েকমাস আগেই।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্পন্ন হয় নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি। প্রতি বছরই দিনটি শুরু হয় প্রভাতবেলায় সার্বজনীন মঙ্গল কামনা করে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অবগাহনের পাথেয় হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।

উৎসবে মতোয়ারা তরুণীরোববার (১৪ এপ্রিল) ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো ...সুরের তালে তালে নববর্ষকে বরণ করে নেয়। বর্ষবরণের ঢেউ লাগে এদেশের কোটি বাঙালির মানসপটে। এরপরেই বর্ষবরণের মূল আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে চারুকলা অনুষদমুখী ভিড় বাড়তে থাকে। ৯টা বাজতেই শাহবাগ থেকে টিএসসি এলাকা বৈশাখের রঙে রঙিন মানুষের পদভারে ভরে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেম গোলাম রব্বানী চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের নেতৃত্বে চারুকলা থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব হয়ে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিদেশি অতিথিএবার শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'নৈবেদ্য' কাব্যগ্রন্থের ৪৮ নম্বর কবিতার 'মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে' চরণ। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের ভাষায় বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সে জন্যই এবারের শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুপ্রেরণার উৎসব সন্ধান করা হচ্ছে।

উচ্ছ্বসিত তরুণীশোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু ‍করে সর্বস্তরের মানুষ। সবাই বৈশাখের বিচিত্র সাজে নিজেদের রাঙিয়েছেন। মুখে রং তুলিতে লেখা ‘শুভ নববর্ষ ১৪২৬’, এসো হে বৈশাখ। ছেলেরা লাল-সাদা পাঞ্জাবি, মেয়েরা বৈশাখী শাড়ি পরেছেন। অনেকে মাথায় গামছা, আর লুঙ্গি পরে নিজেকে পুরো বাঙালিয়ানা সাজে সাজিয়েছেন। ছোট শিশুরাও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বৈশাখ উদযাপনে। বাঁশি, একতারা, খেলনার ঢোল হাতে নিয়ে উল্লাস করেছেন। এছাড়া অংশ নিতে দেখা গেছে অনেক বিদেশি পর্যটক-সাংবাদিককে।

উৎসবে জরুরি নিরাপত্তাবরাবরের মতো শোভাযাত্রা ঘিরে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চার স্তরের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করে। র‌্যালির সামনে পিছনে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। শোভাযাত্রায় সারি করে বাঘ, ঘোড়া, উল্টা কলসি, পেঁচা, কাঠঠোকরা এবং বাঘ ও বকের প্রতিকৃতি সাজানো ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন শুধু আমাদের জাতীয় উৎসব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এর একটি সম্মোহনি শক্তি আছে। মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের এটি একটি পথ। সেকারণে শোভাযাত্রা সব সময় চলমান থাকবে।

কথা বলছেন ঢাবি উপাচার্যঅপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বর্ষবরণের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে বটতলায় সঙ্গীত বিভাগ বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কলা অনুষদের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ খেলাঘর আয়োজন করে শিশুদের বৈশাখী উৎসব। সাংস্কৃতিক শিক্ষায় ডানা মেলুক শিকড় শিরোনামে নাটমণ্ডলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমার স্টাডিজ বিভাগ ও উত্তরণ ফাউন্ডেশন আয়োজন করে বৈশাখের অনুষ্ঠান। খৈ-মুড়ি-পান্তা ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন পান্তা-পুঁটি, ইলিশের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
এসকেবি/এএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।