ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মার তপ্ত বালুচরে বর্ষবরণের উচ্ছ্বাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
পদ্মার তপ্ত বালুচরে বর্ষবরণের উচ্ছ্বাস পদ্মার তপ্ত বালুচরে বিনোদনপ্রেমীরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ‘সেই কোরবানির ঈদের পর তিন দিনের ছুটির আমেজে বর্ষবরণ করলাম। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) অফিস করে রাজশাহী এসেছি। শুক্রবার, শনিবার ও রোববার টানা তিন দিনের ছুটি। ফলে উৎসবের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়াতে পারছি। নদীর পাড়ে এসে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। মনে হচ্ছে ইস! যদি প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সময় এমনভাবে ছুটি থাকতো’। 

রাজশাহীর পদ্মানদীর পাড়ে বেড়াতে এসে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীতে থেকে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক সরকারি চাকরিজীবী। টানা ছুটিতে রাজশাহী এসে সবার সঙ্গে বর্ষবরণ যে কতটা আনন্দের তার কথাই বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম।

তবে কেবল শফিকুলই নয়, রোববার বিকেলে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে তার মতো এমন হাজারো মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন রাজশাহীতে। যেমনটি আসতেন ঈদের আনন্দ করতে। ফলে বৈশাখের তীব্র তাপপ্রবাহ এমন বিনোদনপ্রেমীদের ঘরে আটকে রাখতে যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বিনোদন পিপাসুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর পদ্মানদীর পাড়। শিশু, তরুণ-তরুণী আর পৌঢ়দের ঢল নেমেছে। পদ্মার তপ্ত বালুচরেই চলছে বর্ষবরণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।  পদ্মার তপ্ত বালুচরে বিনোদনপ্রেমীরা।  ছবি: বাংলানিউজরাজশাহী মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত এখন বিনোদনপ্রেমী মানুষের সমাগম চোখে পড়ার মতো। নগরীজুড়ে পুরোদমে চলছে ছুটির আমেজ। হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরেই আছে পদ্মারপাড়।

বিনোদনের জন্য ছুটে আসা মানুষদের কারণে পদ্মাপাড়ের চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের খাবার দোকানগুলোর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি চলবে তাদের।

ভরা নদীর সেই রূপ নেই। তাতে কী মুক্ত বাতাসের খোঁজে বিকেল থেকে নদীর চরেই নেমে পড়েন সবাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কেউ চরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ নদীর পাড়ে বসেই বন্ধু-বন্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ আনার ডিঙি নৌকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন মধ্য চরে। সকাল থেকে লোকজন আসলেও বিকেল থেকে ভিড় বাড়ছে।

মহানগরীর বড়কুঠি পদ্মার পাড় ও বিজিবির সীমান্ত অবকাশ নোঙ্গর এলাকায় শিশু সন্তানদের নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে অনেকেই অনেকভাবে জানান তাদের আনন্দ অনুভূতির কথা।

বাবা আরমান আলীর সঙ্গে সীমান্ত অবকাশে বেড়াতে আসা চার বছরের ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ইরা জানায় পদ্মানদীর পাড়ে বেড়াতে এসে তার কাছে খুব ভালো লাগছে। সে ফুচকা খেয়েছে, পেয়ারা খেয়েছে। কিনেছে বেলুনও। এখনে আসার পর বর্ষবরণের আনন্দ যেন দ্বিগুণ মনে হচ্ছে তার কাছে।   

মহানগরীর শান্তিবাগ এলাকা থেকে আসা জুবায়ের, আরিফ ও সাগর জানান তারা সবাই বন্ধু। চারিদিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে। কিন্তু সবকিছুর চেয়ে পদ্মা পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নির্মল বাতাস তাদের বেশি ভালো লাগে। এজন্য যেকোনো দিনও সময় পেলে তারা পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসেন। এখন পহেলা বৈশাখের উৎসব চলছে। এ উপলক্ষে বেশি লোকজন হওয়া সেখানে আর বেশি আনন্দ হয় বলেও জানান তারা।

এদিকে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে আবীর ও ফুলের প্রীতিবন্ধনীর পাশাপাশি চলছে নাচ ও গানের আয়োজনও। সকাল থেকে মাহনগরীর ফুদকিপাড়া উন্মুক্ত মঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে এসব অনুষ্ঠান চলছে। দিনটি উপলক্ষে তাই সকাল থেকে তারুণ্যের ঢল নেমেছে বড়কুঠি পদ্মাপাড়ের আই-বাঁধ ও টি-বাঁধ এলাকায়। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে বালুচরে নেমে সবাই নববর্ষের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।