ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পুরনো ‘ঘোড়দৌড়’ নতুন হয়ে ফিরলো বৈশাখে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
পুরনো ‘ঘোড়দৌড়’ নতুন হয়ে ফিরলো বৈশাখে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: স্বাধীনতার আগে ও পরে রাজশাহীর মানুষের পরিবহনের একমাত্র উপায় ছিলো ঘোড়ার গাড়ি। তাই এক সময় টমটমের নগর বলা হতো বিভাগীয় শহর রাজশাহীকে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার টমটম ওই সময় দাপিয়ে বেড়াতো রাজশাহী-নাটোরসহ আশপাশের এলাকায়। তবে কালের বিবর্তনে এখন বদলেছে চিত্র।

এখন রাজশাহীতে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩/৪টি ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু সেগুলোও প্রায় রোগাটে।

এ ঘোড়াগুলো এখন কেবল সড়কে মালামাল বহন করে। আর কালেভদ্রে বিভিন্ন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। যাকে বলা যায় কোনোমতে ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা।

কিন্তু বর্ষবরণ উপলক্ষে রোববার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে তিনটি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে মাদ্রাসা মাঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।

এতে তিনটি গাড়ি প্রতিযোগিতা অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় হয়ে করা হয় তাদের মধ্যে থেকেই। তাই পুরস্কৃত হন তিনজনই।

প্রথম পুরস্কার লাভ করেন, পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার তজিবর মিয়া, দ্বিতীয় হন হরিপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার, তৃতীয় হন বহরমপুর এলাকার আব্দুল খালেক।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, ছবি: বাংলানিউজরাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর কবির ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নজরুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর কবির বলেন, ‘এক সময় এ শহরটির প্রধান বাহন ছিলো টমটম। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। হারানো ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতেই এ ঘোড়দৌড়ের আয়োজন। রাজশাহী জেলা প্রশাসন গত বছর স্বাধীনতা দিবসেও এমন আয়োজন করেছিল।

এদিকে, এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে নওহাটা এলাকার অধিবাসী টমটম চালক তজিবর মিয়া বলেন, আগের দিনে টমটম চালিয়ে নিজের সংসার এবং ঘোড়ার খাবারের খরচ চলতো। এখন খরচ ওঠা তো দূরে থাক অনেক দিন ঘোড়ার খাবারই জোটানো যায় না। এর পরও পহেলা বৈশাখে এ আয়োজন করায় তারা খুব খুশি।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ‍তুলে দেওয়া হচ্ছে, ছবি: বাংলানিউজএদিকে, রাজশাহীর টমটম (ঘোড়ার গাড়ি) এ অঞ্চলের একমাত্র বাহন ছিল। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলে কয়েক শতাধিক টমটম চলাচল করতো বলে জানা যায়। ১৯৫৩ সালে কলকাতা থেকে প্রথম রিকশা আনা হলে প্রতিবাদে টমটম চালকরা একদিন হরতালও করেছিলেন। সে সময় রাজশাহী অঞ্চলে শতাধিক জমিদারের বাস ছিল। সবারই নিজস্ব কোচোয়ান (ঘোড়া গাড়ি চালক) ছিল। তাদের বেশ প্রভাবও ছিল। শুধু মুসলিমরাই টমটমের কোচোয়ান হতেন এমন নয়, ভারতের বিহার ও ছোট নাগপুর থেকে দোসাদ নামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী একটি সম্প্রদায় এখানে টমটম চালাতো। তখন একটি তেজি ঘোড়ার দাম ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। পুঠিয়ার বানেশ্বর এবং শিবপুরহাটে এসব ঘোড়া বিক্রি হতো। ৫ মাইলে ভাড়া ছিল এক আনা/দুই আনা।

বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে হাতেগুনা ৩/৪টি। বলতে গেলে হারিয়ে যেতে বসেছে এ ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য ধরে রাখতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাইপাস মোড়ে টমটমের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। পরে তার নাম দেওয়া হয়েছে 'টমটম চত্বর'।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।