এরই মধ্যে ট্রেনটির ভাড়া চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। এতে খাবার মূল্য ১৫০ টাকাসহ শোভন চেয়ারের মূল্য ৫২৫ টাকা এবং এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ারের মূল্য ৮৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরিফুল আলম বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এতে অত্যাধুনিক বিরতিহীন আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণকারীদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে সোনার হরিণ নামের প্রত্যাশিত সেই টিকিট। উদ্বোধনে পরই টিকিট ছাড়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রাজশাহীবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন এই ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবেন। উদ্বোধন ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে রেলমন্ত্রী রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। এই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। ‘বনলতা এক্সপ্রেসের’ উদ্বোধন উপলক্ষে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন পেয়েছে বর্ণিল রূপ। নতুনের মতো ঝকঝকে-তকতকে করে ফেলা হয়েছে গোটা রেলওয়ে স্টেশন।
এছাড়া মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনগত রাতে ইশ্বরদী জংশন থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেছে বনলতা এক্সপ্রেস। ট্রেনটি এখন স্টেশনেই অবস্থান করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার পথে ছুটবে বিরতিহীন এই ট্রেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা।
এদিকে দেশের প্রথম ও সর্বাধুনিক হাইস্পিড ট্রেন হচ্ছে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। কিন্তু রাজশাহী-ঢাকা রুটের জন্য এই একজোড়া ট্রেন পেয়েছে পুরোনো দুটি ইঞ্জিন। এগুলো ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা। এই ইঞ্জিন ঘণ্টায় সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার।
আর বনলতার সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। এতে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত গতিবেগ উঠবে না রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম ও একমাত্র বিরতিহীন এই ট্রেনের। নতুন ইঞ্জিন ও মজবুত ট্র্যাক পেলে এটি প্রতি মিনিটে আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হতো। ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছাতো গন্তব্যে।
বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করে আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। পুরোনো ইঞ্জিনে এসব ট্রেনও চলে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে। মাঝে যাত্রাবিরতি রয়েছে ১৪টি স্টেশনে। এতে রাজশাহী থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা ৬টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকার কমলাপুরে পৌঁছাবে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে। বিরতিহীন চার্জ হিসাবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ভ্রমণকারীদের।
এদিকে বিরতিহীন বনলতায় ভ্রমণকারীদের বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ভাড়ার সঙ্গে ১৫০ টাকা গুনতে হবে খাবার বিলের জন্য। যাত্রীদের জন্য এই খাবার সরবরাহ রেলওয়ের পক্ষ থেকে সৌজন্যমূলক বলা হলেও এর মূল্য পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরিফুল আলম জানান, নতুন ট্রেনের ব্যবহৃত ব্রডগেজ কোচগুলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগৃহীত।
দ্রুতগতির বিরতিহীন আধুনিক এ ট্রেন পরিচালনার ফলে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণের নিরাপদ আসা-যাওয়া সহজতর, দ্রুততর ও আরামদায়ক হবে।
সংগৃহীত কোচসমূহের অন্যতম নতুন বৈশিষ্ট্য হলো- বায়ো-টয়লেট সংযোজন। বায়ো-টয়লেট সম্বলিত কোচ দিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব রেল ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিযে গেলো। ট্রেনটিতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের হুইল চেয়ারসহ চলাচলের সুবিধার্থে থাকছে প্রশস্ত দরজা (মেইন ও টয়লেট দরজা) এবং নির্ধারিত আসনের সুবিধা। প্রতিটি কোচ স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এবং অত্যাধুনিক যাত্রী সুবিধা সম্বলিত। প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে আধুনিক ও উন্নতমানের রুফ মাউন্টেড এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট এবং এয়ার কার্টেইনের ব্যবস্থা রয়েছে।
নতুন আমাদানিকরা কোচগুলো স্টেইনলেস স্টিল বডির তৈরি। জার্মানির ডিজাইনে তৈরি উচ্চগতি সম্পন্ন বগি। জার্মানির তৈরি আধুনিক অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইট। অযুখানাসহ নামাজ ঘর। সুইং ডোর এর পরিবর্তে নিরাপদ স্লাইডিং ডোর। যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক ও মানসম্মত চেয়ার, বার্থ, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর হ্যাঙ্গার, ওয়াই-ফাই রাউটার হ্যাঙ্গার, মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা রয়েছে।
রুট রাইডার কর্তৃক পথের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ট্রেন থামানো রোধে বিশেষভাবে ডিজাইন করা অ্যালার্ম চেইন পুলিং সিস্টেম রয়েছে। এছাড়া খাবার গাড়িতে রয়েছে অত্যাধুনিক ডাইনিংয়ের সুবিধা। ১২টি কোচ নিয়ে ট্রেনটি চলবে। এর মোট আসন সংখ্যা ৯২৮টি । এর মধ্যে এসি চেয়ার ১৬০টি, শোভন চেয়ার ৬৪৪টি, খাবার গাড়িতে আসন ১০৮টি এবং পাওয়ার কারে ১৬টি। এটি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলবে। বনলতা এক্সপ্রেসের অত্যাধুনিক ট্রেনটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম নিজস্ব ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সার্ভিসেস (বিআরসিটিএস) দ্বারা খাবার সরবরাহ করা হবে। খাবার মূল্য ১৫০ টাকাসহ শোভন চেয়ারের মূল্য ৫২৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের মূল্য ৮৭৫ টাকা হবে।
বিরতিহীন ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র বহুল কাঙ্ক্ষিত টিকিট কখন থেকে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে নতুন ট্রেন চলাচল কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। এর কাগজপত্র রাতেই পৌঁছেছে। তাই সকালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পরই এর টিকিট পাওয়া যাবে।
** আধুনিক ‘বনলতা’য় পুরনো ইঞ্জিন, উঠবে না কাঙ্ক্ষিত গতি
বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
এসএস/আরআইএস/